Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ভয়ংকর নভেম্বরের’ পর ডিসেম্বরেও অনিয়ম

ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হয়। ঋণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ।

  • মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা।

  • ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

  • সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংক লোগো

ঋণ অনিয়মের কারণে আলোচনায় থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে (আইবিবিএল) গত ডিসেম্বরেও ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। নিয়ম না মেনে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ।

ব্যাংকটি এমন সময়ে এই অর্থায়ন করেছে, যখন তারল্য সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছেও টাকা ধার করতে হচ্ছে। ঋণ অনিয়ম রোধে ব্যাংকটিতে ১১ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১৫ ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকটির ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ, আদায় ও স্থিতির তথ্যও পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল ব্যাংকটিতে পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

Also Read: বিশেষ ধার পেল ইসলামী ব্যাংক

Also Read: ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে গত ডিসেম্বরেও ব্যাংকটিতে ঋণ অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়ে। এ জন্য এসব ঋণের সুপারিশকারী, অনুমোদনকারী ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এ নিয়ে গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার যত দূর মনে পড়ে, এসব ঋণ বেশ আগে অনুমোদিত হয়েছে। নতুন করে কোনো ঋণ অনুমোদিত হয়নি। এসব ঋণের মেয়াদ নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। নিচের পর্যায়েই তা অনুমোদিত হয়ে গেছে। এ জন্য কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মনে করতে পারছি না।’

ব্যাংকের এসব ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত মধ্যম পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা নিচ্ছেন কি না, তা জানতে চাইলে মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘এমডি হিসেবে আমিই সব সিদ্ধান্ত নিই। প্রয়োজন হলে নির্বাহী কমিটি ও পর্ষদে নেওয়া হয়।’

Also Read: এবার বন্ড ছেড়ে টাকা তুলবে ইসলামী ব্যাংক ও এসআইবিএল

কোন গ্রাহকের কত ঋণ

ঋণসংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের ১৫০০/১। এই গ্রাহককে গত ৬ ডিসেম্বর ২৪০ কোটি টাকা, ৭ ডিসেম্বর ১১০ কোটি টাকা, ১১ ডিসেম্বর ১৩০ কোটি টাকা, ১২ ডিসেম্বর ১২০ কোটি টাকা, ১৩ ডিসেম্বর ১৩০ কোটি টাকা, ১৪ ডিসেম্বর ১২০ কোটি টাকা ও ১৫ ডিসেম্বর ১১৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। মুনাফাসহ এ ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঠিকানা চট্টগ্রামের কোতোয়ালির ৪০,আসাদগঞ্জ। এই গ্রাহককে গত ১৮ থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মাত্র ১১ দিনে দেওয়া হয় ৯৫৯ কোটি টাকা। নথিপত্রে মুনাফাসহ এ ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

Also Read: ঋণের অনিয়ম নিয়ে যা বলল ইসলামী ব্যাংক

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ঠিকানা হাটহাজারীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী। ব্যাংকটি ওই গ্রাহককে সব মিলিয়ে ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই গ্রাহককে গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ঋণ ও ঋণ সুবিধা মিলিয়ে ৫৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। বাকি অর্থ দেওয়া হয় গত ডিসেম্বরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

সম্প্রতি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও চাক্তাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।

Also Read: রেমিট্যান্স পুরস্কার পেল ইসলামী ব্যাংক

এসব ঋণের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হওয়ায় বকেয়া ঋণ অবিলম্বে আদায় করতে হবে। আদায় না হলে এসব ঋণকে ক্ষতিকারক মানে অন্তর্ভুক্ত করে খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। এ ছাড়া এসব গ্রাহকদের ঋণ দিতে সুপারিশ, অনুমোদন ও বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির সভার নথিপত্র পর্যালোচনা করে। ব্যাংকটির এসব ঋণ অনুমোদিত হয় নির্বাহী কমিটির সভায়। ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সরকারি খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ২০ সদস্যের ১৬ জনই ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট। এই ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিচালক। ২০ সদস্যের পর্ষদের বাকি ৪ জনের মধ্যে রয়েছে বিদেশি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবির প্রতিনিধি।

Also Read: তারল্যঘাটতিতে ইসলামী ব্যাংকসহ ৫ ব্যাংক