Thank you for trying Sticky AMP!!

শ্যামপুরের রাসায়নিক গুদাম

ভাড়া কমিয়েও শ্যামপুরে গুদাম ভাড়ায় সাড়া নেই

শ্যামপুরের রাসায়নিক গুদাম ভাড়ার আবেদনে মেলেনি সাড়া


শুরুতে গুদামের প্রতি বর্গফুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল মাসে ৭০ টাকা। পরে তা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ৩৮ টাকা করা হয়েছে।

ভাড়া কমানোর পরও শ্যামপুরের রাসায়নিক গুদাম ভাড়া নেওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা। আগে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ৭০ টাকা, তা কমিয়ে এখন ৩৮ টাকা করা হয়েছে। তবু ভাড়া হচ্ছে না এসব গুদাম। ফলে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব রাসায়নিক গুদাম। অথচ ঝুঁকি কমাতে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব গুদাম এক জায়গায় আনতে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীর শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম স্থাপন করা হয়েছিল।  

গত বছরের জুনে রাজধানীর শ্যামপুরের অস্থায়ী রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামের উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত আট মাসে এসব গুদাম ভাড়ার জন্য একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণও করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমানো হয়েছে গুদামের ভাড়াও। কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও গুদাম ভাড়ায় আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এখন পর্যন্ত একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান সেখানে গুদামঘর ভাড়া নিয়েছে।

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাসায়নিক গুদাম থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভয়াবহ এ ঘটনায় ৭১ জন মারা যান। এই ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ কারখানার জমিতে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অর্ধশতাধিক আধুনিক গুদাম নির্মাণ করে বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি)। 

বিসিআইসি সূত্রে জানা যায়, শ্যামপুরে মোট ৫৪টি গুদামঘর রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র গুদামঘর ভাড়া হয়েছে। এ ছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠান গুদাম ভাড়ার জন্য আবেদন করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শ্যামপুরের রাসায়নিক ব্যবসায়ীর তুলনায় গুদামের সংখ্যা অনেক কম। আর অস্থায়ী গুদামের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তা-ও বেশি। তবে বিসিআইসি বলছে, সার্বিক সুযোগ-সুবিধা ও বাজারদর হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্থায়ী রাসায়নিক গুদামে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভাড়াও আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। তারপরও খুব বেশি সাড়া পাচ্ছি না।’

তিন দফায় বিজ্ঞপ্তি, কমেছে ভাড়া

গুদাম ভাড়ার জন্য এখন পর্যন্ত তিন দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিসিআইসি। শ্যামপুরের প্রতিটি গুদামের আকার ১ হাজার ৪৪৪ বর্গফুট। তবে গুদামের জন্য বরাদ্দ অফিস, সামনের খোলা জায়গা, নিরাপত্তাচৌকি, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, গভীর নলকূপ, পানির ট্যাংক ইত্যাদিসহ মোট ২ হাজার ৫৬ বর্গফুট জায়গার জন্য ভাড়া দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

২০২৩ সালে প্রথম দফায় ভাড়ার বিজ্ঞপ্তিতে প্রতি বর্গফুটের জন্য মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৭০ টাকা। তাতে একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি গুদামের জন্য মাসে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। এর সঙ্গে বিভিন্ন পরিষেবা খরচ বাবদ আরও অন্তত ২০ হাজার টাকা যুক্ত হওয়ার কথা। তাই ওই বছর ভাড়ার আবেদনে কোনো সাড়া দেননি ব্যবসায়ীরা। এরপর গত বছরের ১০ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৭০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৮ টাকা করা হয়। তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুদাম ভাড়ার জন্য কেউ আবেদন করেনি।

Also Read: শ্যামপুরের রাসায়নিক গুদাম ভাড়ার আবেদনে মেলেনি সাড়া

সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

যা বলছেন ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ রাসায়নিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির (বিসিআইএমএ) মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, শ্যামপুরের গুদামের জায়গা ঢাকার ব্যবসায়ীদের জন্য দূরে হয়ে গেছে। তাই সেখানে যেতে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বিসিআইএমএর নেতারা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন এলাকায় গুদামের জন্য বর্তমানে প্রতি বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গা ১০-২০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যায়। সেখানে শ্যামপুরে ৩৮ টাকা ভাড়া অনেক বেশি। বিসিআইএমএর মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই ভাড়ায় কোনো ব্যবসায়ী শ্যামপুরে যেতে চাইবেন বলে মনে হয় না। 

Also Read: শ্যামপুরে বিসিআইসির রাসায়নিক গুদামের ভাড়া বেশি, তাই আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গুদামের ভাড়া আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। তারপরও তা অনেক বেশি।

এদিকে শ্যামপুরের গুদামে পুরান ঢাকার রাসায়নিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চেয়েছে বিসিআইসি। সম্প্রতি বিসিআইসি থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে ডিএনসিসি মেয়রের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এত দিন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এগিয়েছি। তাতে ভালো সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’