শ্যামপুরের রাসায়নিক গুদাম ভাড়ার আবেদনে মেলেনি সাড়া

গুদামের প্রতি বর্গফুটের জন্য মাসে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। এ ভাড়ায় সেখানে গুদাম স্থানান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদামগুলো। অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় নির্মাণ করা হয়েছে ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক। গুদামঘরের সামনে রয়েছে ফায়ার হাইড্রেন্ট। ঢাকার শ্যামপুর এলাকায়
ফাইল ছবি

রাজধানীর শ্যামপুরে অস্থায়ীভাবে বানানো রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম গত ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। এরপর গুদামগুলো ভাড়া নেওয়ার জন্য ২৪ জুলাই থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে রাসায়নিক পণ্যের ব্যবসায়ীদের আবেদন করতে বলা হয়। এ জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংও করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একজন ব্যবসায়ীও গুদাম ভাড়ার আবেদন করেননি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুদামের জন্য কর্তৃপক্ষ যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা অনেক বেশি। এ ভাড়ায় গুদাম ভাড়া নিতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা। তাই ভাড়া কমানোর জন্য তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেবেন। এদিকে ভাড়া নিয়ে মতবিরোধের জেরে উদ্বোধনের তিন মাস পরও খালি পড়ে আছে শ্যামপুরের অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম।

রাসায়নিক গুদাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ সোমবার সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভা রয়েছে। সেখানে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

‘শিল্প মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরামর্শে প্রতি বর্গফুটে ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এখন ব্যবসায়ীরা এই ভাড়ায় সেখানে যেতে চাইছে না। তাই আমরা তাদের ভাড়া নিয়ে একটি প্রস্তাব দিতে বলেছি। সেটি পর্যালোচনা করে বিসিআইসির পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
মো. সাইদুর রহমান, বিসিআইসির চেয়ারম্যান

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। এ ঘটনায় মোট ৭১ জনের মৃত্যু হয়। চুড়িহাট্টার সেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল সেখানকার রাসায়নিকের গুদাম থেকে।

ওই ঘটনায় গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির তদন্তে তা বেরিয়ে আসে। তাই ওই কমিটি জরুরি ভিত্তিতে পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করে।

চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির জমিতে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিসিআইসি।

প্রতিটি ধাপে বিলম্ব

অস্থায়ী গুদাম তৈরির ১০ মাসের প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর। কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিসিআইসি আনুষ্ঠানিকভাবে গুদাম বুঝে পায় চলতি বছরের ১৮ জুলাই। তার আগে গত ৪ জুন ঘটা করে এসব গুদামের উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

শ্যামপুরে প্রায় ৬ একর জায়গায় মোট ৫৪টি গুদামঘর গড়ে তোলা হয়েছে। একেকটির আয়তন ১ হাজার ৪৪৪ বর্গফুট। তবে গুদাম ছাড়াও অফিস কক্ষ ও অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৫৬ বর্গফুট জায়গার ভাড়া দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

গত ১৯ জুলাই বিসিআইসি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২ বছরের জন্য গুদামের ভাড়া ও অন্যান্য শর্তের কথা জানায়। তাতে ২৪ আগস্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। রাসায়নিক গুদামের প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৭০ টাকা। সে অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠানকে মাসে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তাসহ অন্যান্য পরিষেবার জন্য ২০ হাজার টাকার বেশি আরও বিল আসতে পারে। সব মিলিয়ে মাসে খরচ হতে পারে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এই ভাড়াকে অনেক বেশি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ অ্যাসিড মার্চেন্ট সমিতির সভাপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের কেমিক্যাল ও পারফিউমারি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদউল্লাহ পলাশ জানান, শ্যামপুরের অস্থায়ী রাসায়নিক গুদামের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অবাস্তব।

রাজধানীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে প্রায় একই সুবিধার ভবনে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৬০ টাকার আশপাশে। সেখানে ঢাকার এক প্রান্তে অবস্থিত শ্যামপুরে এত বেশি ভাড়া কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়।

লিফলেট-মাইকিংয়েও কাজ হয়নি

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা যেন তাঁদের রাসায়নিক পণ্যের গুদাম শ্যামপুরে সরিয়ে নেন, সে জন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার লিফলেট বিতরণ করেছে বিসিআইসি। পাশাপাশি চার দিন সেসব এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলেছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।

বিসিআইসি কর্মকর্তা ও পুরান ঢাকার রাসায়নিক গতকাল রোববার সকালে চারটি রাসায়নিক পণ্য ব্যবসায়ী সমিতি ও অন্য অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা করেছে বিসিআইসি। সভায় ব্যবসায়ীরা ভাড়া নিয়ে আবারও আপত্তি জানিয়ে তা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরামর্শে প্রতি বর্গফুটে ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এখন ব্যবসায়ীরা এই ভাড়ায় সেখানে যেতে চাইছে না। তাই আমরা তাদের ভাড়া নিয়ে একটি প্রস্তাব দিতে বলেছি। সেটি পর্যালোচনা করে বিসিআইসির পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’