শ্যামপুরে বিসিআইসির রাসায়নিক গুদামের ভাড়া বেশি, তাই আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের

৫৪টি গুদামের সব কটিতে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। উদ্বোধনের আড়াই মাসে গুদামগুলোতে ওঠেনি কোনো রাসায়নিক দ্রব্য।

ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদামগুলো। অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় নির্মাণ করা হয়েছে ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক। গুদামঘরের সামনে রয়েছে ফায়ার হাইড্রেন্ট। গতকাল সকালে ঢাকার শ্যামপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর ঘিঞ্জি এলাকার রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামগুলো সরিয়ে নিতে শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অস্থায়ী ভিত্তিতে অর্ধশতাধিক আধুনিক গুদাম নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি)। গত ৪ জুন উদ্বোধনের প্রায় আড়াই মাস হলেও একটি গুদামেও কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ওঠেনি। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো আগ্রহই দেখা যাচ্ছে না।

শ্যামপুরের গুদাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিসিআইসির উপসহকারী প্রকৌশলী জাবের আবদুল্লাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, পুরান ঢাকাসহ ঘনবসতিপূর্ণ, ঘিঞ্জি এলাকায় যেসব রাসায়নিক দ্রবে৵র গুদাম রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা গুদাম ভাড়া নিতে পারবেন। অনেকে জানেন না এখানে সরকারি গুদাম রয়েছে। তাই তাঁদের গুদামে আসার বিষয়ে গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় তাঁরা প্রচারণা চালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মিটফোর্ডসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রচারণা চালানো হবে।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। আগুনে পুড়ে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুরান ঢাকা থেকে সরিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজধানীর শ্যামপুরে গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিসিআইসি।

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের প্রায় চার বছর সাত মাস পর ১৪ আগস্ট রাজধানীর কেরানীগঞ্জের কালিন্দী গদারবাগে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামে বিস্ফোরণে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নতুন করে পুরান ঢাকাসহ ঘিঞ্জি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে রাসায়নিকের গুদাম নিয়ে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম সরিয়ে নিতে শ্যামপুরে আলী বহর এলাকায় উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুদাম তৈরির উদ্যোগ নেয় বিসিআইসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নৌবাহিনীর নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। ৫৪টি গুদাম নির্মাণ শেষে বিসিআইসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় গত ১৮ জুলাই।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের জন্য দুটি তিনতলা ভবন, বিসিআইসির একটি শাখা কার্যালয় ও নিরাপত্তা প্রহরীদের বড় একটি কক্ষ রয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য গুদাম এলাকায় ৫০০ টন পানির ওভারহেড ট্যাংক, প্রায় এক হাজার টন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক করা হয়েছে। পানি উত্তোলনের জন্য দুটি সাবমারসিবল পাম্প, তিনটি গুদামের পরপর একটি করে ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার সেফটি অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি গুদামের সঙ্গে উন্মুক্ত জায়গা এবং একটি ১৫০ বর্গফুটের অফিস কক্ষ রাখা হয়েছে। প্রতিটি গুদামের ছাদে প্রতিরোধক দণ্ড লাগানো হয়েছে। বিসিআইসি গুদামের প্রতি বর্গফুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। ১ হাজার ৪৪৪ বর্গফুট গুদাম, ১৫০ বর্গফুট অফিসকক্ষ ও উন্মুক্ত জায়গাসহ মোট ২ হাজার ৫৬ বর্গফুটের জন্য ভাড়া পড়বে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ টাকা।

গত ১৬ জুলাই থেকে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন বিসিআইসির ছয়জন নিরাপত্তা প্রহরী। নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গুদাম উদ্বোধনের পর সাত-আটজন ব্যবসায়ী এসে ভাড়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। অনেকে ঘুরে দেখে গেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদুল্লাহ্ পলাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন প্রতি বর্গফুট গুদাম ভাড়া ৭০ টাকা নির্ধারণ করে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। শ্যামপুরের মতো জায়গায় প্রতি বর্গফুট ৭০ টাকা ভাড়া হয় কী করে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে কি এত টাকা ভাড়া দিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব। বড়জোর ভাড়া হতে পারে ১০ থেকে ২০ টাকা। এ কারণে সেখানে ব্যবসায়ীরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

বিসিআইসির উপসহকারী প্রকৌশলী (কেমিক্যাল) জাবের আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।