Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের মোট দেড় পারা পড়া হবে—অষ্টম পারার শেষ অর্ধেক এবং নবম পারার পুরো অংশ। সুরা আরাফের ১২ থেকে সুরা আনফালের ৪০ আয়াত পর্যন্ত। আদম ও হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় আসার ঘটনা, শয়তানের ধোঁকা, লজ্জা, বিভিন্ন জাতি ধ্বংসের কারণ, মুসা (আ.)-এর মোজেজা, অপচয়, নবীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে কী বলেছিলেন, জবাবে সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকজন কী বলেছিল, ফলে আল্লাহ কী করেছেন, আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ, বনি ইসরাইলের ওপর আল্লাহর শাস্তি, শয়তানের ধোঁকা থেকে মানুষকে বাঁচার নির্দেশ, মুসা (আ.)-এর লাঠি, ফেরাউনের জাদুর সাপসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে।

শয়তান কেন বিতাড়িত

আজকের তারাবিহর দ্বিতীয় আয়াতেই পড়া হবে আল্লাহর সঙ্গে শয়তানের বাগ্‌বিতণ্ডার কথা। আল্লাহর সৃষ্টিতে ফেরেশতা ও জিন ছিল মানুষেরও আগে। জিন জাতির সদস্য ছিল ইবলিশ; ছিল আগুনের তৈরি। সে থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। মন লাগিয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। আল্লাহর সৃষ্টিতে তার ইবাদতের আলাপ হতো। তাকে শ্রদ্ধা করত। দুনিয়াতে আল্লাহ মানুষকে প্রতিনিধি বানাতে চাইলেন। আদম (আ.) সৃষ্টি করলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন, আদমকে সেজদা করতে। ফেরেশতারা সেজদা করল; কিন্তু বেঁকে বসল ইবলিশ। সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করল। নিজেকে আগুনের তৈরি বলে অহংকার করল। আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হলেন। বের করে দিলেন জান্নাত থেকে।

খাবারে মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেয়

সুরা আরাফের ৩১ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরিমাণমতো খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অপব্যয় নিষেধ করেছেন। এই আয়াতের অধীন মুসলিম পণ্ডিতরা আটটি মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন। এক, প্রয়োজনমতো পানাহার করা ফরজ। দুই, শরিয়তে কোনো খাদ্যবস্তু অবৈধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সব বস্তুই হালাল। তিন, আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তুগুলো ব্যবহার করা অপব্যয় ও অবৈধ। চার, যেসব বস্তু আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন, সেগুলো হারাম মনে করাও অপব্যয় এবং মহাপাপ। পাঁচ, পেট ভরে খাওয়ার পরও আহার করা নাজায়েজ। ছয়, এতটুকু কম খাওয়াও অবৈধ, যার ফলে কর্ম সক্ষমতা হারিয়ে যায়। সাত, সব সময় পানাহারের চিন্তায় মগ্ন থাকাও অপব্যয়। আট, মনে কিছু চাইলেই তা অবশ্যই খাওয়া অপব্যয়। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৪৩৮)

Also Read: রমজানে ছয়টি অভ্যাস

আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন

সুরা আরাফের ৫৪ আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা এসেছে। কোরআনে আরও একাধিক জায়গায় এ ব্যাপার এসেছে। আরশ বলা হয় রাজসিংহাসনকে। এখন আল্লাহর আরশ কীরূপ এবং কী? এর ওপর অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থই–বা কী? এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ কথা হলো, মানবজ্ঞান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির স্বরূপ পূর্ণরূপে অনুধাবন করতে অক্ষম। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন এবং পরবর্তীকালের সালাফদের অভিমত এটাই। (৩০ মজলিসে কুরআনের সার নির্যাস, পৃষ্ঠা ৯৮-৯৯)

প্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি

এ সুরার ৬৫ থেকে ৮৭ আয়াতে প্রাচীন ছয় সম্প্রদায়ের অবাধ্য ও গজবে ধ্বংস হওয়ার আলোচনা রয়েছে।

১. নুহ (আ.)-এর জাতি: মূর্তিপূজা না ছাড়ার কারণে ভয়ংকর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দিয়ে নুহ (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

২. আদ জাতি: শক্তি ও ক্ষমতার বাহাদুরি এবং মূর্তিপূজা না ছাড়ার কারণে বিভিন্ন আজাব দিয়ে হুদ (আ.)-এর সম্প্রদায় আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

৩. সামুদ জাতি: আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যার কারণে ভূমিকম্প দিয়ে সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায় সামুদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

৪. লুত (আ.)-এর জাতি: সমকামিতার অপরাধে ভূমি উল্টে পাথর বৃষ্টি দিয়ে লুত (আ.)-এর জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

৫. মাদায়েনবাসী: তওহিদে অবিশ্বাস, মাপে কম দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ, অর্থনৈতিক অসততা ও মানুষকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়ায় ভূমিকম্প দিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর সম্প্রদায় মাদায়েন জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

৬. ফেরাউন ও তার জাতি: নিজের ক্ষমতার প্রতি অন্ধ মোহ, মুসা ও হারুন (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করার কারণে ফেরাউন ও তার জাতিকে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল।

Also Read: তারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে

পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ

সুরা আরাফের ১৭৫ ও ১৭৬ আয়াতে আল্লাহ জ্ঞানী বালয়াম ইবনে বাউরার ঘটনা তুলে ধরেছেন, যে স্বীয় জ্ঞান দুনিয়ার তুচ্ছ জিনিসের বিনিময়ে বিক্রি করার কারণে অপদস্থ ও ধ্বংস হয়েছিল। বালয়াম ছিল একজন বিজ্ঞ আলেম ও সাধক। বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী কেনানের অধিবাসী ছিল। তখন মুসা (আ.)-এর সময়কাল। মুসা (আ.) জাব্বারিন (আধিপত্যবাদী) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সৈন্যবাহিনী নিয়ে সিরিয়ায় আসেন। এদিকে বালয়াম ইবনে বাউরার গোত্রের লোকেরা তার কাছে এসে মুসার বিরুদ্ধে বদদোয়া কামনা করল। বালয়াম নবী মুসা (আ.)–এর কথা শুনে তাদের ধিক জানিয়ে বিদায় দিল। লোকেরা আবার এল। বালয়াম বলল, ‘আমি আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম, তিনি নিষেধ করেছেন।’ তখন লোকেরা তাকে উপহার দেয়। সে তা গ্রহণ করে। লোকেরা তাদের চাওয়া অব্যাহত রাখল। বালয়াম আল্লাহর কাছে আবার অনুমতি চাইল। এবার কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। লোকেরা বলল, আল্লাহ যেহেতু কিছুই জানালেন না, এবার তবে দোয়া করুন। বালয়াম দোয়া করতে গিয়ে আল্লাহর কুদরতে নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেই দোয়া করল। নিজ সম্প্রদায়ের ওপর ধ্বংস নেমে এল। তার জিহ্বা বেরিয়ে এসে বুকের ওপর লটকে গেল।

Also Read: ইসলাম যাদেরকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে

সুরা আনফালে যুদ্ধের বিধান

পবিত্র কোরআনের অষ্টম সুরা আনফাল মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ৭৫। আনফাল ‘নফল’ শব্দের বহুবচন। অর্থ অতিরিক্ত। অবিশ্বাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে যে সম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়, তাকে নফল বা গনিমত বলা হয়। এ সুরায় গনিমতের সম্পদ বণ্টন নিয়ে আলোচনা থাকায় এ সুরাকে আনফাল বলা হয়।

বিশ্বাসীদের ৫ বৈশিষ্ট্য

সুরা আনফালের ২ থেকে ৪ আয়াতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ এসব গুণের অধিকারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ক্ষমা করেন এবং সম্মানজনক রিজিক দেন। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: আল্লাহর ভয়, কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর ওপর ভরসা, নামাজের সংরক্ষণ ও আল্লাহর বান্দাদের ওপর অনুগ্রহ।

সুরা আনফালের ৫ থেকে ৪০ আয়াতে আল্লাহর পথে জিহাদ, গনিমতের সম্পদ বণ্টনের নীতি, নবীজির বিরুদ্ধে কাফেরদের ষড়যন্ত্র, বদর যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ, মুসলমানদের অভিভাবক আল্লাহ, কাফেরদের ঠিকানা জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

 আবু আশফাক মুহাম্মাদ : লেখক ও আলেম

Also Read: নারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা