Thank you for trying Sticky AMP!!

স্পোর্টিং লিসবন কোচ রুবেন আমোরিম

লিভারপুলের আগ্রহের কেন্দ্রে কে এই আমোরিম

বয়স মাত্র ৩৯ বছর। স্পোর্টিং লিসবন কোচের দায়িত্বে আছেন চার মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে পর্তুগিজ ক্লাবটিকে দ্বিতীয়বার লিগ শিরোপা জেতানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রুবেন আমোরিম। তবে কিছুদিন ধরেই কোচকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ক্লাবটির ভক্তরা। জোর গুঞ্জন, মৌসুম শেষেই লিসবনের দায়িত্ব ছেড়ে লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন আমোরিম। জাবি আলোনসো লিভারপুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমোরিমের অ্যানফিল্ডে আসার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়, কিছুদিন ধরেই ইংল্যান্ডের শীর্ষ কোনো ক্লাবে কোচের পদ খালি হলেই সামনে চলে আসেন আমোরিম। এর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম এবং চেলসির সঙ্গে জড়িয়েও শোনা গিয়েছে গুঞ্জন। ফলে লিভারপুলে ক্লপের উত্তরসূরি হিসেবে আমোরিমের আসার গুঞ্জন একেবারেই অমূলক ছিল না।

Also Read: ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডে যাঁকে কোচ বানাতে চায় লিভারপুল

তবে আলোনসো লেভারকুসেনে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমোরিমকে নিয়ে গুঞ্জনটা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে নতুন খবর, আমোরিমকে জাভি হার্নান্দেজের জায়গায় পেতে চায় বার্সাও। আমোরিম নিজে অবশ্য স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি শুধুই লিসবনের কোচ। এর বাইরে আর কিছু ভাবছেন না। কিন্তু রাজনীতির মতো ফুটবলেও সম্ভবত শেষ কথা বলে কিছু নেই।

তাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগপর্যন্ত আমোরিমের লিভারপুলে যাওয়া না–যাওয়া নিয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অবশ্য লিভারপুলের কোচ হওয়ার জন্য ব্রাইটন কোচ রবার্তো ডি জেরবির সঙ্গে আমোরিমের জোর লড়াই হওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। তবু লিসবন সমর্থকদের স্বস্তি নেই। গুঞ্জনটা যে শুধুই ডালপালা মেলছে!
২০২১ সালে লিসবনকে ১৯ বছর পর লিগ শিরোপা জিতিয়ে প্রথম ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোর নজরে আসেন আমোরিম।

লিসবনকে ১৯ বছর পর লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন রুবেন আমোরিম

বেনফিকা ও পোর্তোর দাপটকে গুঁড়িয়ে আমোরিমের এই শিরোপা জয় ছিল দারুণ এক অর্জন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে এই কীর্তি গড়েন পর্তুগিজ কোচ। সে সময় আরেক তরুণ কোচ জুলিয়ান নাগলসমানের সঙ্গেও বেশ তুলনা হয় আমোরিমের। অনেকে তখন তাঁকে ‘স্পোর্টিংয়ের নাগলসমান’ বলেও ডাকতে শুরু করে। আমোরিমের এই সাফল্য ক্লাব সভাপতি ফেদেরিকো ভারান্দাসের জন্যও ছিল দারুণ স্বস্তির। কারণ, তাঁর নিয়োগ নিয়ে সে সময় বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ভারান্দাসকে।

সে সময় সমালোচকদের প্রথম তিরটি ছিল আমোরিমের খেলোয়াড়ি জীবনকে ঘিরে। পর্তুগালের হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলা আমোরিম খেলোয়াড়ি জীবনে লম্বা সময় খেলেছিলেন বেনফিকার হয়ে। ২০০৮–১৭ পর্যন্ত লিসবনের প্রতিদ্বন্দ্বী এই ক্লাবের হয়ে তিনটি লিগ শিরোপা জেতেন আমোরিম। দ্বিতীয়ত, অনভিজ্ঞতা। লিসবনে নিয়োগ পাওয়ার আগে মাত্র দুটি ক্লাবে স্বল্প মেয়াদে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর।

Also Read: ক্লপের বিদায়ের পর লিভারপুলের নতুন কোচ হবেন কে

পর্তুগালের তৃতীয় সারির ক্লাব সাসা পিয়ার হয়ে কোচিং শুরু করা আমোরিম ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেন ব্রাগার বি দলের। এরপর ব্রাগার মূল দলের হয়ে মাত্র ১৩ ম্যাচ (যার মধ্যে ১০টিতেই জেতেন এবং লিগ কাপ ফাইনালে পোর্তোকে হারিয়ে ব্রাগাকে শিরোপাও এনে দেন) দায়িত্ব পালন করেই আসেন লিসবনে। তাই তাঁর নিয়োগ আসলেই লিসবনের জন্য ভালো কিছু হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল অনেকের। ২০২০–২১ মৌসুমে লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি আরও তিনটি ঘরোয়া ট্রফি জেতেন আমোরিম।

এই সিদ্ধান্তের সমালোচনার আরেকটি কারণ ছিল তাঁকে দেওয়া অর্থ। আমোরিমের চাকরি নিশ্চিত করতে লিসবনকে দিতে হয়েছিল ১০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা তাঁকে সে সময় বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি কোচে পরিণত করেছিল। তবে সমালোচকদের পাত্তা না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন ভারান্দেস, যার প্রতিদান আমোরিম দিয়েছিলেন শিরোপা জিতেই।

মৌসুম শেষে দায়িত্ব ছাড়ছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ

লিসবনে অবশ্য শুরুটা ভালো হয়নি আমোরিমের। ২০১৯–২০ মৌসুমের শেষ তিন ম্যাচে জয় না পেয়ে ব্রাগার কাছে তৃতীয় স্থান খুইয়ে চারে নেমে যায় লিসবন। এর মধ্যে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে তরুণ এ কোচের দুশ্চিন্তা বাড়ায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পোর্তো এবং বেনফিকা। দলবদলে বেশ খরচ করে দল গড়ে এ দুই দল। বিপরীতে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমোরিমকে হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হয়। সে সময় আর কোনো উপায় না থাকায় অ্যাকাডেমি থেকে নুনো মেন্ডেস এবং গনসালো ইনাসিওর মতো খেলোয়াড়দের তুলে আনতে হয় তাঁকে।

Also Read: লেভারকুসেন: ফুটবল মাঠে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে যারা

এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে পেদ্রো গনসালভেস ৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনার পাশাপাশি জোয়াও মারিও এবয় পেদ্রো পোরোকে ধারে নিয়ে আসে লিসবন। বুদ্ধিদীপ্ত সাইনিংয়ের সঙ্গে আমোরিমের কৌশলে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ক্লাবটি। আর এখন লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় লিগ শিরোপার জন্য লড়ছেন আমোরিম। ফলে দলকে সাফল্য এনে দেওয়া এই কোচকে এখন আর হারাতে চায় না লিসবন সমর্থেকরা। আমোরিমও চান ক্লাবকে আরও শিরোপা এনে দিতে। তবে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের বাজার বাস্তবতায় সেটা আসলেই সম্ভব কি না, তা সময়ই বলে দেবে।