Thank you for trying Sticky AMP!!

৪৪ বছর বয়সেও নাসির দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে খেলছেন

প্রিমিয়ার লিগে ‘সবচেয়ে বেশি বয়সী’ নাসিরের গর্ব শৃঙ্খলা

দেশের হয়ে খেলেছেন, ক্যারিয়ারও বেশ দীর্ঘ। ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন দেশের ঘরোয়া ফুটবলে। তবে নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর গর্বের জায়গাটা ভিন্ন। শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবনই তাঁর গর্বের জায়গা। নাসির মনে করেন, জীবন সুশৃঙ্খল বলেই ৪৪ বছর বয়সেও তিনি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে খেলতে পারছেন। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়ও জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডার।

সেনাবাহিনীর ফুটবলার হিসেবেই নাসিরের ক্যারিয়ারের শুরু। সেটি ১৯৯৮ সালের কথা। তখন দেশে শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ বেশ হইচই ফেলেছিল। ২০০০ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সেনাবাহিনী ফাইনালে নোয়াখালী জেলার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল। তবে সেবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সেনাবাহিনী চমক দেখিয়েছিল সেমিফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলকে হারিয়ে।

Also Read: দেশ কবে মুক্ত হবে, ঢাকায় বসে সেই প্রতীক্ষায় ফর্টিসের ইউক্রেনীয় ফুটবলার

নাসির ছিলেন সেই সেনাবাহিনী দলের খেলোয়াড়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল জাতীয় ফুটবল দলেরই ‘মিনি সংস্করণ’। ২০০০ সালে সেই দলে খেলেছিলেন আরিফ খান জয়, হাসান আল মামুন, সাইফুল বারী টিটুদের মতো শীর্ষ তারকারা। সে টুর্নামেন্ট নাসিরের ফুটবল ক্যারিয়ারেই স্মরণীয়। তবে দেশের ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে নাসির প্রথম খেলা শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালে কোটি টাকার সুপার কাপ দিয়ে, চট্টগ্রাম মোহামেডানের জার্সিতে, সেনাবাহিনীর ছাড়পত্র নিয়েই। চট্টগ্রাম মোহামেডান খেলেছিল সেমিফাইনালে। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর দলটির হয়ে অভিষেক। প্রথম ম্যাচেই গোল করেছিলেন।

শেখ জামাল ধানমন্ডির ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন নাসির

২০০৯ সালে পেশাদার লিগে অভিষেক নাসিরের। প্রথম দল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। খেলেছেন দুই মৌসুম। ২০১১ সালে চলে যান মুক্তিযোদ্ধায়। দুই মৌসুম সেখানে খেলে এরপর যান শেখ জামাল ধানমন্ডিতে। সেই ক্লাবে ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছিলেন নাসির। ২০১৬ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ধানমন্ডির ক্লাবটিতে।

এরপর খেলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী ও ঢাকা আবাহনীর হয়েও। এক মৌসুম খেলেছেন বসুন্ধরা কিংসে। এরপর আবারও ঢাকা আবাহনী ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ঘুরে এই মৌসুমে ফিরেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবার তিনি খেলছেন ১৫তম মৌসুম। ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ২৭৫টি। যে বয়সে তাঁর সমসাময়িক খেলোয়াড়েরা অবসরে গিয়ে কোচিং কিংবা অন্য পেশায় জড়িয়েছেন, সেখানে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেওয়া নাসির এখনো পুরোদস্তুর ফুটবলার! বাংলাদেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটা একটু অন্য রকমই।

Also Read: লিভারপুল–ভিলার উত্থান, ইউনাইটেডের পতন—মাঝপথে প্রিমিয়ার লিগ যেমন

নাসির মনে করেন শৃঙ্খলাটা শিখেছেন সেনাবাহিনীর কাছ থেকে, ‘আমার ফুটবলার জীবনের ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছে আসলে সেনাবাহিনীই। আমি তো মনে করি শুধু খেলোয়াড় নয়, প্রতিটি সুস্থ-সবল মানুষেরই ছোট করে হলেও সেনাবাহিনীর একটা প্রশিক্ষণ দরকার। সেখানে তাঁর শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিচয় তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে সে পরিশ্রম করাও শিখবে।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ‘রহস্য’ তেমন কিছু নয় বলেই জানালেন নাসির, ‘রহস্য বলুন, আর যা-ই বলুন, আমি শৃঙ্খলা মেনে চলেছি। কখন খেতে হবে, কখন ঘুমাতে হবে, এটা ঘড়ি ধরে মেনে চলেছি। খাওয়াদাওয়ায় সতর্ক থেকেছি। অনেক ত্যাগ আছে আমার। আমি ফুটবলের জন্য অনেক প্রিয় খাবার বাদ দিয়েছি। গরু, খাসির মাংস, মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেছি। প্রচুর পরিশ্রম করেছি। মোটকথা, ফিটনেসের ক্ষতি করে—এমন সবকিছুই বাদ দিয়েছি।’

জাতীয় দলে একটা সময় নিয়মিত মুখই ছিলেন নাসির

জাতীয় দলে একটা সময় নিয়মিত মুখই ছিলেন নাসির। অধিনায়কত্বও করেছেন। দেশের জার্সিতে ম্যাচ খেলেছেন ৩০টির বেশি (নির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না)। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। সার্বিয়ান কোচ গোরান জর্জেভিচ তাঁর প্রথম কোচ। এরপর ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের কাছে অনেক কিছুই শিখেছেন, ‘জর্জভিচ, ডি ক্রুইফের গাইডলাইন আমার জীবন বদলে দিয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছে। তবে আমাদের মারুফ ভাইয়ের (কোচ মারুফুল হক) বড় ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল হকই আমাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার পেছনে বড় অবদান রেখেছেন।’

Also Read: আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান পুরস্কারের তালিকায় বাংলাদেশের মারুফা

দেশের ফুটবলে দীর্ঘ ক্যারিয়ার অবশ্য নাসিরের আগে আরও কয়েকজনের আছে। নাসিরের চেয়েও বেশিসংখ্যক লিগ ও ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়ের তালিকাটাও তারকাখচিত। জাতীয় দলের সাবেক চার অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ, হাসান আল মামুন, বিপ্লব ভট্টাচার্য, রজনীকান্ত বর্মণদের ক্যারিয়ারও দীর্ঘ। দীর্ঘ ক্যারিয়ার ওয়ালি ফয়সালেরও।

নাসির খেলে যেতে চান আরও কিছুদিন

নাসির খেলে যেতে চান আরও কিছুদিন। তবে কত দিন খেলবেন, সে বিষয়ে নিজের একটা মানদণ্ডও নির্দিষ্ট করেছেন, ‘যত দিন ফিট থাকব, তত দিন খেলব—এ-জাতীয় কথা আমি বলতে চাই না। সবকিছুর একটা শেষ আছে। আমার ক্যারিয়ারেরও সমাপ্তি ঘটবে স্বাভাবিক নিয়মেই। হয়তো খুব বেশি দিন আমি খেলব না। আমি একটা মানদণ্ড আমার সামনে রেখেছি। ধরুন, আমি মোরছালিন, রাকিবদের মতো খেলোয়াড়দের ঠেকাতে পারছি কি না, তাদের পা থেকে নিয়মিত বল কাড়তে পারছি কি না, এটাই আমার মানদণ্ড। দলের বোঝা হয়ে আমি থাকতে চাই না।’

Also Read: ‘রিয়ালের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না’ জিরোনা