লিভারপুল–ভিলার উত্থান, ইউনাইটেডের পতন—মাঝপথে প্রিমিয়ার লিগ যেমন

প্রিমিয়ার লিগে দারুণ ছন্দে আছে লিভারপুলরয়টার্স

চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছে। ৩৮ ম্যাচের মধ্যে ৪টি দল ছাড়া বাকিরা এরই মধ্যে খেলে ফেলেছে ২০টি করে ম্যাচ। প্রত্যাশিতভাবেই মাঝমৌসুমে দারুণ রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ লিগ। গত মৌসুমে সেরা চারে থাকতে না–পারা লিভারপুল এখন সবার ওপরে। এর মধ্যে মৌসুমের সবচেয়ে বড় চমক অ্যাস্টন ভিলা দখল করে আছে ২ নম্বর স্থানটি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি পথ হারিয়ে আছে ৩ নম্বরে। যদিও লিভারপুল ও ভিলার চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলেছে তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে পথ হারালেও শিরোপা লড়াইয়ে টিকে আছে আর্সেনালও। এই চার দল যখন শিরোপা লড়াইয়ে একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছে, তখন পথ হারিয়ে নিজেদের খুঁজে ফিরছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি। ইংলিশ ফুটবলে পরাশক্তি বিবেচিত হওয়া ইউনাইটেড ও চেলসির অবস্থান যথাক্রমে ৮ ও ১০ নম্বরে। খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই গত মৌসুমে চমক দেখিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নেওয়া নিউক্যাসলও।

আরও পড়ুন

অন্য দিকে অবনমনের দৌড়ে এগিয়ে আছে লুটন টাউন, বার্নলি এবং শেফিল্ড ইউনাইটেড। গত বছর কোনোভাবে অবনমন ঠেকানো মার্সিসাইড ক্লাব এভারটন এবারও এখন পর্যন্ত অবনমন অঞ্চলের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের প্রথম ভাগ ছিল চমক, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনায় ঠাসা। মৌসুমের রোমাঞ্চকর এই প্রথম ভাগ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি বাছাই করেছে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

লিভারপুরের ফেরা

গত মৌসুমটা লিভারপুলের জন্য ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। প্রথম কয়েক রাউন্ডের পর শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া দলটি মৌসুম শেষ করেছিল পাঁচে থেকে। যার ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ হারিয়ে তাদের খেলতে হচ্ছে ইউরোপা লিগে। সে সময় লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপ যুগের সমাপ্তিও দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। বলা হচ্ছিল, লিভারপুলে ক্লপের জাদুর কাঠির দিন শেষ। সেবার মৌসুমজুড়ে লিভারপুল সংগ্রাম করেছে মাঝমাঠ নিয়ে। কার্যকর মিডফিল্ডার না থাকায় আক্রমণ এবং রক্ষণ কোনোটাই ঠিকঠাক করতে পারেনি তারা। এমনকি ১০ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডে কেনা দারউইন নুনিয়েজের দলবদলও মনে হচ্ছিল ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ক্লপও।

দারুণ ছন্দে আছেন সালাহ
রয়টার্স

ব্যর্থ মৌসুম শেষে দলবদলে মাঝমাঠে শক্তি বাড়ানোয় জোর দেয় লিভারপুল। দমিনিক সোবোসলাই, অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার এবং ওয়াতারু এন্দোদের দলে ভেড়ায় দলটি। তবে নতুন খেলোয়াড়দের চেয়ে লিভারপুলের জন্য বড় স্বস্তি ছিল গোলরক্ষক আলিসন বেকার, অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক এবং ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহর সেরা ছন্দে ফেরা।

বিশেষ করে রক্ষণে ফন ডাইক এবং সালাহ এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত মৌসুম কাটাচ্ছেন। বর্তমানে ২০ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেও আছে অ্যানফিল্ডের দলটি। তবে সালাহ মিসরের হয়ে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস খেলতে যাওয়ায় তাঁকে ছাড়া এক মাসের বেশি সময় খেলতে হবে লিভারপুলকে। সালাহবিহীন সময়টা লিভারপুল কীভাবে সামাল দেয়, তার ওপরই নির্ভর করছে লিভারপুলের শিরোপাভাগ্য।

আরও পড়ুন

উত্থান–পতনে সিটি

গত মাসেই ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর বাইরে মাসটা সিটির জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত। এ সময় ছয় ম্যাচের মাত্র একটিতে জেতে তারা। দলের অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে খোদ কোচ পেপ গার্দিওলা আগামী মৌসুমে নিজেদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে গত মৌসুমে ট্রেবল জেতা দলটি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বড়দিনের পর টানা দুই ম্যাচে জিতেছে তারা।

ম্যান সিটি কি শিরোপা ধরে রাখতে পারবে
এএফপি

এখন শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে তারা। ১৯ ম্যাচে সিটির পয়েন্ট ৪০। গত মৌসুমে অবশ্য প্রথমার্ধ ভালো কাটেনি সিটির। কিন্তু পরের অর্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। এবারও সিটির প্রত্যাশা পরের ভাগে দাপট দেখিয়ে শীর্ষে ফেরার। এর মধ্যে চোট কাটিয়ে ফিরেছেন দলের ‘মাঝমাঠের প্রাণ’ কেভিন ডি ব্রুইনাও। বেলজিয়ান তারকার ফেরা নিশ্চিতভাবেই শক্তি বাড়াবে সিটির। এখন গত মৌসুমের মতো এবারও দ্বিতীয় ভাগে সিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চ ছড়ানো অ্যাস্টন ভিলা

সম্ভবত এই মৌসুমের সবচেয়ে বড় চমকগুলোর একটির নাম অ্যাস্টন ভিলা। উনাই এমেরির অধীনে দুর্দান্ত এক মৌসুম পার করছে ভিলা পার্কের ক্লাবটি। এরই মধ্যে ২০ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ২ নম্বরে আছে দলটি। শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে পয়েন্ট না হারালে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান আরও ভালো হতে পারত। ভিলা যে কেবল চমক দেখিয়ে ম্যাচ জিতছে, তা নয়, তাদের পারফরম্যান্সও ছিল মুগ্ধতা জাগানো। সিটির বিপক্ষে ১–০ গোলে জেতা ম্যাচটির কথাই ধরা যাক। সেই ম্যাচে সিটিকে কোণঠাসা করে জয় আদায় করে তারা। এখন মৌসুমের শেষ ভাগে তাদের পারফরম্যান্স কেমন হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

এরিক টেন হাগের অধীনে ভালো অবস্থায় নেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
এএফপি

এ কোন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

এরিক টেন হাগের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গত মৌসুমটা ছিল আশা জাগানো। সেরা চারে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকিটও পায় ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটি। কিন্তু নতুন মৌসুমে ঠিক বিপরীত চিত্র দেখছে টেন হাগের দল। বছর শেষ হওয়ার আগেই তারা হেরেছে ১৪ ম্যাচ। ছিটকে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে। প্রিমিয়ার লিগে তাদের অবস্থান ৮ নম্বরে।

এর মধ্যে টেন হাগের ছাঁটাই গুঞ্জনও একাধিকবার সামনে এসেছে। এখনো ছাঁটাই না হলেও দ্রুত দল ছন্দে না ফিরলে চাকরি হারাতে হতে পারে তাঁকে। এর মধ্যে দলের মালিকানায়ও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক কেমিক্যাল কোম্পানি ইনিওসের মালিক স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ ইউনাইটেডের ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন মালিক কি নতুন বছরে ইউনাইটেডের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন?

আরও পড়ুন

চেলসির ‘ফ্লপ–শো’

অর্থ যে সবকিছু বদলে দিতে পারে না, তার বড় উদাহরণ সম্ভবত চেলসি। খেলোয়াড় কিনতে পানির মতো টাকা খরচ করেছে ক্লাবটি। একের পর এক তারকাকে দলেও ভিড়িয়েছে। কিন্তু সাফল্য যেন দলটির জন্য সোনার হরিণ। গত মৌসুমে তারা শেষ করেছিল ১২ নম্বরে থেকে। এবারও এখন আছে ১০ নম্বরে। দলের এমন ব্যর্থতার কারণে চাপে আছেন কোচ মরিসিও পচেত্তিনোও। এখন দলের ভাগ্য বদলাতে শীতকালীন দলবদলে নতুন খেলোয়াড় কেনার কথা ভাবছে তারা। যদিও তা বিশেষ কোনো পরিবর্তন আদৌ আনতে পারে কি না, সেই আশঙ্কাও আছে।