‘মেসিকে কাছে গিয়ে বলব, এত দুর্দান্ত আপনি কেমন করে খেলেন?’
স্বপ্নের মতো এক টুর্নামেন্টই কাটল শামসুন্নাহারের। অনুর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতাও। চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার গতকাল দুপুরে বাফুফে ভবনের জিমনেসিয়ামের বারান্দায় বসে কথা বললেন তাঁর ও দলের সাফল্য নিয়ে—
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঠে দাঁড়িয়েই মাকে স্মরণ করছিলেন। এ নিয়ে যদি বিস্তারিত বলেন...
শামসুন্নাহার: আমি ভালো কিছু করলে মায়ের কথা স্মরণ করি, খারাপ কিছু হলেও মাকে মনে পড়ে। মায়ের সহযোগিতা ছিল বলেই ফুটবলে আসতে পেরেছিলাম। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি। গতকাল (পরশু) অধিনায়ক হিসেবে প্রথম শিরোপা জিতে মাকে অনেক মিস করেছি। অবশ্য আমি আরেকজনকেও ‘আম্মু’ বলে ডাকি।
তিনি কে?
শামসুন্নাহার: আমার কোচ জুয়েল ভাই (কলসিন্দুরের স্থানীয় কোচ জুয়েল আহমেদ) আমাকে বোন বানিয়েছেন। ওনার মাকে আমি আম্মু ডাকি। ফুটবল শুরুর পর থেকেই জুয়েল ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। জুয়েল ভাইয়ের আম্মু আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমি হাঁসের মাংস পছন্দ করি। এ জন্য ফাইনালের আগে আম্মু মাংস রান্না করে পাঠিয়েছেন। রাতে ক্যাম্পে ফিরে সবাই মিলে খেয়েছি।
বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চয়ই আপনার খেলা দেখেছেন...
শামসুন্নাহার: সবাই দেখেছে। আমার তিন বছরের ভাগনে মজা করে বলছিল, খালামণি, তুমি মাঠের মধ্যে বারবার পড়ে যাও। বলছিল, যারা আমার খালামণিকে ফেলে দিচ্ছে, ওদের গিয়ে মারব (হাসি)।
Also Read: ‘আপু, আপনি তো মার্তিনেজ’—শুনে আপ্লুত রুপনা
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতে কেমন আনন্দ করলেন?
শামসুন্নাহার: আমার রুমে অনেক হইচই হয়েছে। রুমমেট মার্জিয়া আপু, আনিকা তানজুম। বাকিরা জুনিয়র। এমনিতে ওদের সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটাতে পারি না। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতে ওদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি।
আপনি এর আগে অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-১৯ ও সাফের চ্যাম্পিয়ন দলে খেলেছেন। এবার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন দলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন। সাফের সব চ্যাম্পিয়ন দলে খেলা বাংলাদেশের একমাত্র ফুটবলার আপনি। এমন কীর্তির পর কেমন লাগছে?
শামসুন্নাহার: বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেলার বয়স আছে এবং আমি পারফরম্যান্স দেখিয়ে খেলতে পারছি। যেহেতু আমি জুনিয়র, চেষ্টা করি সিনিয়রদের দলে যতটুকু সুযোগ পাই, ততটুকু কাজে লাগাতে। বয়সভিত্তিকে আগের দুটি আসরে অধিনায়ক হয়েও দলকে জেতাতে পারিনি। এবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরে খুব খুশি আমি।
এ পর্যন্ত যতগুলো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলে খেলেছেন, এর মধ্যে কোনটা স্মরণীয়?
শামসুন্নাহার: ২০১৭ সালে ঢাকায় যখন সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ দলে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো, তখন বুঝতাম না দেশের হয়ে খেলার মযার্দা এত বেশি। আমার তখন ১৬ নম্বর জার্সি ছিল। স্যার (কোচ গোলাম রব্বানী) সুযোগ দিলে ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে যোগ হওয়া সময়ে নামি। এখনো মনে আছে, আমি দুইটা টান (মুভ) দিয়েছিলাম। ওটা দেখেই স্যাররা আমার খেলা পছন্দ করেন। তখন থেকেই আমাকে প্রতি ম্যাচে ৫-১০ মিনিট করে সুযোগ দিতেন। স্যাররা বলতেন, তুমি যদি শেষের দিকে নামো, দু-তিনটা দৌড় দিলেই ওরা হাঁপিয়ে যাবে। এখন খেলতে খেলতে অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। পুরো সময় খেলার সাহস পাই।
বলছিলেন দেশের হয়ে খেলার মর্যাদা আগে বুঝতেন না, ছয় বছরের ক্যারিয়ারে এখন কী মনে হচ্ছে?
শামসুন্নাহার: শুরুতে বুঝতাম না ফুটবল কী, ফুটবলে এত কিছু আছে জানতাম না। একটা পর্যায়ে ভালো লাগা থেকেই ফুটবল শুরু করি। সেটা থেকেই আজ এখানে। এখন মনে হয় দেশের জন্য কিছু করি।
এবারের দলে কেমন সম্ভাবনাময় ফুটবলার দেখেছেন?
শামসুন্নাহার: দলের সবার ভেতরে ভালো করার ক্ষুধা আছে। রক্ষণে সুরমা, প্রান্তি, নাসরিন, মিডফিল্ডে উন্নতি, মাহফুজা, সোহাগী, স্বপ্না দুর্দান্ত খেলেছে। যাকে যখন নামানো হয়েছে, ভালো করেছে। ফাইনালে মাহফুজার বদলি হিসেবে নেমে উন্নতি গোল করেছে।
ভুটানের ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পর আপনার সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন ভুটানের ফুটবলাররা। এমন ঘটনা কি আগেও ঘটেছে মাঠে?
শামসুন্নাহার: না, ঘটেনি। ওরা খেলা শেষ করে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে এসে জিজ্ঞাসা করছিল, আমি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম চালাই কি না। ফাইনালে ওরা ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার করছিল। আমরা যখনই আক্রমণে উঠেছি, তখনই চিৎকার করেছে। আমি সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়ায় ওরা খুশি। ওরা আমার খেলার ধরনটা পছন্দ করেছে। আমার চুল বাঁধার স্টাইলও ওদের ভালো লেগেছে। এমন অবস্থায় নিজেকে দেখতে ভালোই লাগে। তারকা ফুটবলারদের যেমন ফ্যান থাকে, তেমনই মনে হচ্ছিল। আমিও তো কারও না কারও ফ্যান!
আপনি কার ভক্ত?
শামসুন্নাহার: আমি লিওনেল মেসির ভক্ত। যখন মেসিকে কাছ থেকে দেখব, জানি না কতটা রোমাঞ্চিত হব। মেসিদের বাংলাদেশে আসার গুঞ্জন শুনেছি। সত্যি যদি আসে, তাহলে মেসিকে কাছে গিয়ে বলব, আপনি এত দুর্দান্ত কেমন করে খেলেন?
এখন আপনাকেও অনেকে চিনছে...এটা কেমন উপভোগ করছেন?
শামসুন্নাহার: আমাকে অনেকেই চেনে, নাম ধরে ডাকে, এটা অনেক ভালো লাগে। নিজের নামে পরিচিত হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।
বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলের ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন?
শামসুন্নাহার: মাত্রই দু-তিনবার লিগ হয়েছে। তা–ও দুর্বল লিগ। এক দলেই ভালো ফুটবলার সবাই। বড় ক্লাবগুলো এগিয়ে এলে ফুটবলাররা লাভবান হবে।
আরও পড়ুন
-
ছয় ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ছয়টি, একটি আবার এজেন্টের
-
অসত্য তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ ও জোসেফ
-
আজিজ আহমেদ বললেন, নিষেধাজ্ঞার ঘটনা সরকারকেও কিছুটা হেয় করে
-
আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-
বাগান থেকে ভোটের মাঠে, ‘চা কন্যা’র আরেক লড়াই