Thank you for trying Sticky AMP!!

কাশেম সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে সক্ষম ইরান?

ইরানের ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলায় হত্যা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন ইরানিরা। গতকাল তেহরানে জাতিসংঘ ভবনের সামনে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের এই মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচিত খবর ইরানের ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার কাশেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড। ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলায় তাঁকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে যুদ্ধ থামাতে, আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে নয়। তবে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলি খামেনি প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিবিসি অনলাইন ইরানের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। ইরান এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে কতটা প্রস্তুত, সামরিক শক্তির এই পরিসংখ্যান তা স্পষ্ট করবে বলে তাদের ভাষ্য।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী কতটা বড়?
ইরানের সামরিক বাহিনীতে আনুমানিক ৫ লাখ ২৩ হাজার সদস্য আছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এমন তথ্য জানিয়ে বলেছে, এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ নিয়মিত বাহিনীর এবং কমপক্ষে দেড় লাখ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্য। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের নৌবাহিনীর হয়ে আরও ২০ হাজার সদস্য কাজ করে। এই সদস্যরা হরমুজ প্রণালিসহ আশপাশের জলভাগকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। আজ থেকে ৪০ বছর আগে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড প্রতিষ্ঠা করা হয় ইরানের ইসলামিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে। ধীরে ধীরে এটি দেশটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

বিদেশে অভিযানে কতটা সফল?
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন কাশেম সোলাইমানি। বলা হয়ে থাকে, সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধের গতি–প্রকৃতি তিনি বদলে দিয়েছেন। লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনে জিহাদিদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন তিনি। তিনি তাঁর কাজের জন্য কেবল সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলি খামেনির কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের একটি ইউনিট সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের জন্য কাজ করে। তাদের পক্ষে লড়তে শিয়া যোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে তারা। ইরাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়তে শিয়ানিয়ন্ত্রিত আধা সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে দেখে এমন সংগঠনগুলোকে কুদস বাহিনী অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সমরসরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করে। লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ এই তালিকার অন্যতম।

অর্থনৈতিক সংকট ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অস্ত্র আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর তুলনায় তাদের অস্ত্র আমদানির সংখ্যা অনেক কম। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সৌদি আরব যত অস্ত্র আমদানি করেছে, ইরানের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ তার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ইরান অস্ত্র আমদানি করে মূলত রাশিয়া ও চীন থেকে।

ইরানের কি ক্ষেপণাস্ত্র আছে?
এই প্রশ্নটার উত্তর হলো ‘হ্যাঁ’। শুধু তা–ই নয়, ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ইরানের সামরিক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিসাইল শক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী; বিশেষত স্বল্পপাল্লা ও মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে। ইরান মহাকাশপ্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, যাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে পারে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটর তথ্যমতে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির কারণে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প আপাতত বন্ধ রেখেছে ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ফলে যেকোনো সময় ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প চালু করতে পারে বলে তাদের শঙ্কা। তবে ইরানের হাতে বর্তমানে স্বল্প ও মধ্যমপাল্লার যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আছে ,তা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোয় হামলা চালানো সম্ভব। সম্ভবত, এগুলো ইসরায়েলেও আঘাত হানতে পারবে। ইরানের সঙ্গে উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করে।

অপ্রচলিত অস্ত্রের সম্ভার
বহু বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকেও ইরান তাদের ড্রোন–সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সাল থেকে ড্রোন ব্যবহার করছে ইরান। সিরিয়ার ঘাঁটি থেকে ইরান ইসরায়েলের আকাশসীমায় সশস্ত্র ড্রোন পাঠিয়েছে। ২০১৯ সালে হরমুজ প্রণালিতে ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছিল।

বিবিসির প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক প্রতিবেদক জনাথন মার্কুসের ভাষ্য, ইরানের ড্রোনপ্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর আরেকটি বড় কারণ হলো তারা এই প্রযুক্তি মিত্রদের কাছে বিক্রি বা ভাগাভাগি করতে চায়।

২০১৯ সালে ড্রোন ও মিসাইল হামলায় সৌদি আরবের বড় দুটি তেলক্ষেত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে আসছিল। তবে ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ইয়েমেনের বিদ্রোহীরা এই ঘটনার দায় স্বীকার করলেও তা বিশ্বাস করেনি যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব।

ইরানের সাইবার সক্ষমতা আছে?
২০১০ সালে ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই বিষয়টির প্রতি জোর দেয় ইরান। ধারণা করা হয়, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের নিজস্ব সাইবার ব্যবস্থাপনা আছে। এর মাধ্যমে তারা বাণিজ্যিক ও সামরিক গোয়েন্দাগিরি করে থাকে।

২০১৯ সালের মার্কিন সামরিক প্রতিবেদন বলছে, ইরান বিশ্বব্যাপী তাদের সাইবার গোয়েন্দাগিরি বাড়াতে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন ফার্মকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ওই বছরই মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একদল হ্যাকার কাজ করছে। এই হ্যাকার গোষ্ঠী ইরানি এবং ইরানের সরকারের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
সোলাইমানিকে হত্যার জন্য এই সময় বেছে নেওয়া কেন?
মধ্যপ্রাচ্যে আরও ৩ হাজার মার্কিন সেনা
যুদ্ধ থামাতে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা: ট্রাম্প