যুদ্ধ থামাতে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা: ট্রাম্প

নিহত কাসেম সোলাইমানি। ছবি: এএফপি
নিহত কাসেম সোলাইমানি। ছবি: এএফপি

যুদ্ধ থামাতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, তাঁকে (কাসেম সোলাইমানি) হত্যা করা হয়েছে ‘যুদ্ধ বন্ধে, আরেকটি (যুদ্ধ) শুরু করতে নয়’। তাঁর মতে, সোলাইমানির ‘সন্ত্রাসের শাসন শেষ’। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তাঁর মার-আ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ কথা বলেন।

আজ শনিবার ভোরে ইরাকে নতুন করে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস্ ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরাকে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। গতকাল শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেনারেল সোলাইমানির গাড়িবহর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় সোলাইমানিসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়।

সোলাইমানি কুদস ফোর্সের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রধান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।

এই হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত ইরাক ত্যাগ করতে সতর্কতা জারি করেছে।

এর আগে গত রোববার ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর (হিজবুল্লাহ ব্রিগেড) অন্তত ২৫ সদস্য নিহত হন। আহত হন ৫৫ জন। কাতাইব হিজবুল্লাহ ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে ও সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইরান সমর্থিত বাহিনী। ওই হামলার ঘটনার জেরে ক্ষোভ জানাতে বিক্ষোভকারীরা গত মঙ্গলবার ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাইরের দিকের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভে হাজার হাজার শোকাহত মানুষের সঙ্গে কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিসসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মিলিশিয়া নেতা যোগ দেন। এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে নববর্ষের প্রাক্কালে এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দেন, যেকোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইরানকে ‘বড় ধরনের মূল্য’ দিতে হবে।

আজ বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সতর্কতা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে আরও তিন হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

সোলাইমানিকে হত্যার ২৪ ঘণ্টা পর ইরাকে আরও একটি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইরাকের সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আজ ভোরে ইরাকি মিলিশিয়ার গাড়িবহরে নতুন হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।

মার-আ-লাগো রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মার-আ-লাগো রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার-আ-লাগো রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প শুক্রবারের হামলা নিয়ে বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী নির্ভুল হামলা চালিয়ে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে। সোলাইমানি মার্কিন কূটনীতিক ও সামরিক সদস্যদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু এটা করার আগেই যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ধরে ফেলেছে এবং সরিয়ে দিয়েছে।

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিসও ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, হামলায় কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে ১০ জন নিহত নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তাঁদের পাঁচ সদস্য রয়েছেন।

সোলাইমানির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিবৃতিতে বলেন, আল্লাহর কাছে তাঁর (কাসেম সোলাইমানি) চলে যাওয়ার মানে তাঁর পথ বা মিশনের শেষ নয়, বরং যারা তাঁর এবং অন্য শহীদদের রক্তে হাত লাল করেছে, সেই সব অপরাধীর জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর প্রতিশোধ।

৬২ বছর বয়সী জেনারেল সোলাইমানিকে সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ মনে করা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সমরজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। সিআইএ-মোসাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি ছিলেন বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাসেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল।

রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস্ ফোর্স’ সোলাইমানির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছিল। ২১-২২ বছর ধরে বাহিনীটি গড়ে তোলেন তিনি।

‘কুদস্ ফোর্স’ অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’। এই ফোর্সের প্রধান কর্মক্ষেত্র মূলত ইরানের বাইরে। কুদস্ ফোর্স ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন সোলাইমানি।

সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।