Thank you for trying Sticky AMP!!

পারমাণবিক অস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, কার পাল্লা ভারী

রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সামরিক যান

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর সাত মাস ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে নিজেদের দখলে থাকা কিছু এলাকায় রুশ সেনারা নাস্তানাবুদ হচ্ছেন, এমন খবর আসছে। এরই মধ্যে ‘আংশিক সেনা সমাবেশের’ ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। হুমকি দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে হাতে থাকা সব অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানবেন।

গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ওই ঘোষণা ও হুমকি দেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়লে এবং রাশিয়া ও আমাদের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমরা অবশ্যই হাতে থাকা সব অস্ত্র কাজে লাগাব। আর এটা কোনো ধাপ্পাবাজি নয়।’

Also Read: ইউক্রেনে দখল ধরে রাখতে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হবে: মেদভেদেভ

১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আরডিএস-১’। পারমাণবিক অস্ত্রের ওই পরীক্ষা চালানো হয়েছিল কাজাখস্তানের সেমিপালাতিনস্কে।

ভাষণে পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টিও তুলে ধরেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তাঁর ভাষা ছিল এমন, ‘যারা পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের এটা জেনে রাখা উচিত, নিশানা ঘুরে তাদের দিকেও যেতে পারে।’

পুতিনের এই হুমকিকে ঘিরে পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, তখন রাশিয়াসহ বিশ্বে সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

Also Read: ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য নতুন সেনাদের তালিকা করছে রাশিয়া

যেসব দেশের পারমাণবিক অস্ত্র আছে

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট চলতি বছরের শুরুর দিকে এ নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছিল। তাদের হিসাব বলছে, বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশের হাতে প্রায় ১২ হাজার ৭০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দেশগুলো হলো রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, ভারত, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া।

এই দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র আগেই ধ্বংস করেছে। তারপরও বর্তমানে দেশ দুটির হাতে রয়েছে বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশ।

১৯৮৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের কাছে সর্বোচ্চ পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। সম্মিলিতভাবে সংখ্যাটা ৬৫ হাজারের কাছাকাছি। সে সময় স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের ওই প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই তাদের পারমণবিক অস্ত্রগুলো বর্জন করেছে। ১৯৮৯ সালে দেশটির তত্কালীন সরকার পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প স্থগিত করে। পরের বছর তাদের ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করা হয়। আরও দুই বছর পর পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে একটি চুক্তিতে (এনপিটি) নাম লেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন দেশ হিসেবে পরিচিতি পায় আফ্রিকার দেশটি।

Also Read: এখন উল্টো ইউক্রেনের হামলার ভয় রুশদের মধ্যে

রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র

রাশিয়ার হাতে আনুমানিক ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৮৮টি বর্তমানে মোতায়েন করা আছে। এর মানে, এই অস্ত্রগুলো হয় আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে (আইসিবিএম) যুক্ত রয়েছে অথবা ভারী বোমারু বিমানের ঘাঁটিগুলোতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রাশিয়ার ২ হাজার ৮৮৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তাত্ক্ষণিক হামলার জন্য রাখা হয়নি, তবে প্রয়োজন পড়লে ভবিষ্যতে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। বাকি ১ হাজার ৫০০টির মেয়াদ ফুরিয়েছে। সেগুলো ধ্বংস করা হবে।

১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আরডিএস-১’। পারমাণবিক অস্ত্রের ওই পরীক্ষা চালানো হয়েছিল কাজাখস্তানের সেমিপালাতিনস্কে।

এর এক দশকের বেশি সময় পর ১৯৬১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় ‘জার বোমা’ নামের একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। ওই বোমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ৩ হাজার ৩০০ গুণ শক্তিশালী ছিল।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই তাদের পরমাণু অস্ত্রগুলো বর্জন করেছে। ১৯৮৯ সালে দেশটির তত্কালীন সরকার পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প স্থগিত করে। পরের বছর তাদের ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করা হয়।

পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে চুক্তি

১৯৬৮ সালে একটি চুক্তি করা হয়। ‘নন-প্রলিফিরেশন অব নিউক্লিয়ার ওয়েপন (এনপিটি)’ নামের চুক্তিটির লক্ষ্য বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার।

ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ছাড়া স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নিজেদের কাছে পারমাণবিক বোমা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। এর বিনিময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি পায় তারা। চুক্তিতে বলা হয়, এ প্রক্রিয়ার পুরোটাই দেখভাল করবে জাতিসংঘ।

Also Read: ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে এখন গণভোট কেন

বর্তমানে এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ১৯০টি। স্বাক্ষর না করা দেশগুলো হলো ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও দক্ষিণ সুদান। ১৯৮৫ সালে উত্তর কোরিয়া ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তবে ২০০৩ সালে সেখান থেকে সরে যায় তারা। এর তিন বছর পর দেশটির তত্কালীন সর্বোচ্চ নেতা কিম জং–ইলের আমলে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটায় উত্তর কোরিয়া।

Also Read: রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্যিই কি কাজ করছে?