Thank you for trying Sticky AMP!!

পুতিনের দুনিয়া এখন আরও ছোট

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের সফল পাল্টা আক্রমণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে রুশ বাহিনী। এমনকি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ খেরসন থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এসব কারণে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে রুশ সেনাদের ব্যর্থতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনা-কটাক্ষের মুখে পড়ছেন তিনি। সব মিলিয়ে রুশ নেতা পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রীতিমতো যেন একটা বাজি ধরলেন।

দুর্দান্ত কৌশলবিদ হওয়ার পরিবর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনকে হতাশা ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি এ যুদ্ধ থেকে যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন, তার প্রায় কিছুই পাননি। যুদ্ধক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, ভুল রণকৌশল ও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে দূরে রেখেছে। তাই এখন পুতিন পশ্চিমাদের হুঁশিয়ার করে পারমাণবিক হামলা চালানোর ভয় দেখাচ্ছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ৩ লাখ সেনা নিযুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। পাশাপাশি এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অব্যাহতভাবে সমর্থন জোগালে, অর্থ-অস্ত্র সহায়তা দিলে, প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবেন না তিনি। এরই মধ্যে তিনি ইউক্রেনের রুশনিয়ন্ত্রিত চার অঞ্চলে গণভোট শেষে সেসব অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে ডিক্রিতে সই করেছেন।

এখন এই অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ হবে রাশিয়ার নিজ ভূখণ্ডে হামলার শামিল। এতে রাশিয়ার প্রতিশোধ গ্রহণের কৌশল জোরালো হবে। এসব কর্মকাণ্ড গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করা ও দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরানোর ক্ষেত্রে পুতিনের সিদ্ধান্তের ভুল হিসাব-নিকাশই তুলে ধরেছে। হামলা শুরুর ৯ মাস পরও পুতিন এ ভুল থেকে শিক্ষা নেননি; অথচ সেই ভুল প্রথমেই তাঁর জন্য বিপর্যয়-ধ্বংস ডেকে এনেছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সেনাদের জোরদার যুদ্ধ হচ্ছে।

পুতিনের চার ভুল

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পরপরই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, প্রেসিডেন্ট পুতিন চারটি বড় ভুল হিসাব কষেছেন। প্রথমটি, রুশ সেনাবাহিনীর শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে অতিমূল্যায়ন। এতে কোনো সন্দেহ নেই, তিনি যা শুনতে চাইবেন, তাঁর খুব কাছের মানুষগুলো তাঁকে শুধু তা-ই শোনাবেন। সে অনুযায়ী, পুতিনও দৃশ্যত বিশ্বাস করে নেন, ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের ঝটিকা অভিযানেই সমাপ্তি ঘটবে ইউক্রেন যুদ্ধের; সেই সঙ্গে পতন ঘটবে কিয়েভের; এরপর জেলেনস্কি হয় আত্মসমর্পণ করবেন, নয় পালাবেন এবং তাঁর স্থলে রুশনিয়ন্ত্রিত একটি পুতুল সরকার বসানো হবে। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই হয়নি।

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ইউক্রেনে অভিযানে যাওয়ার সময় রুশ সেনা কর্মকর্তারা সঙ্গে করে যুদ্ধে প্রত্যাশিত জয় উদ্‌যাপনে কুচকাওয়াজের আনুষ্ঠানিক পোশাক নিয়ে যান। কিন্তু রাশিয়ার সেনারা সেখানে প্রেসিডেন্ট পুতিনের (এবং দৃশ্যত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর) ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা রাজধানী কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি; বরং তাঁদের অপমানজনকভাবে পিছু হটতে হয়েছে। পিছু হটার পথে তাঁরা রেখে এসেছেন ধ্বংসযজ্ঞ আর কিয়েভের উপকণ্ঠে বুচা শহর ও কাছাকাছি অন্যান্য এলাকায় নৃশংসতার চিহ্ন।

ভ্লাদিমির পুতিনের অন্যতম বড় ভুল, ইউক্রেনের জনগণ ও সেনাবাহিনীকে ছোট করে দেখা বা অবমূল্যায়ন করা। ইউক্রেনীয়দের জাতীয়তাবোধ ও লড়াইয়ের মনোভাব সম্পর্কে পুতিনকে সম্ভবত ভুল বোঝানো হয়েছে। পুতিন যদি এ আশা করে থাকেন যে ইউক্রেনীয়রা তাঁদের রুশ ‘মুক্তিদাতাদের’ ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন, তবে তিনি এক বিরাট ভুল করেছেন।

অনেক রুশ তরুণকে এই বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু লড়াইয়ের জন্য তাঁদের প্রস্তুতি ছিল সীমিত। ছিল না যথাযথ প্রশিক্ষণ। এমনকি এসব তরুণেরা জানতেনই না, ইউক্রেনে তাঁরা যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন। রুশ সেনাদের মনোবল ও সাহসেও ছিল ঘাটতি। ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম মেরামত করার প্রয়োজন ছিল, সামরিক বাহিনীর রসদ ও সেনা সরবরাহব্যবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে টিকে থাকতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও খাবারও সঙ্গে নিয়ে যাননি রুশ সেনারা। এ ছাড়া রুশ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি সামরিক বাহিনীতেও চিড় ধরিয়েছে। সেনাদের প্রশিক্ষণ ও সাজসরঞ্জাম বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ গেছে দুর্নীতিবাজদের পকেটে, এমন অভিযোগও ছিল।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ৫ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে

হিসাবের দ্বিতীয় বড় ভুল, ইউক্রেনের জনগণ ও সেনাবাহিনীকে ছোট করে দেখা বা অবমূল্যায়ন করা। ইউক্রেনীয়দের জাতীয়তাবোধ ও লড়াইয়ের মনোভাব সম্পর্কে পুতিনকে সম্ভবত ভুল বোঝানো হয়েছে। পুতিন যদি এ আশা করে থাকেন যে, ইউক্রেনীয়রা তাঁদের রুশ ‘মুক্তিদাতাদের’ ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন, তবে তিনি এক বিরাট ভুল করেছেন।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারি ও দনবাস অঞ্চলে অভিযান ইউক্রেনীয়দের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে আরও বেগবান করেছে; যা পুতিন ধরতে পারেননি। এ বছর যখন রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করল, তখন জেলেনস্কিকে কিয়েভ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাঁর জবাব ছিল, ‘আমার উড়োজাহাজের দরকার নেই, আমার দরকার অস্ত্র।’

এ অবস্থায় দৃশ্যত রাশিয়া ইউক্রেনে মস্কোপন্থী সরকার গঠন করার জন্য কাউকে খুঁজে পায়নি। পরে এমন গুঞ্জনও শোনা যায়, ইউক্রেনে নিজেদের সহযোগীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব পাওয়া রাশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) উচ্চপর্যায়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আগে কমেডিয়ান ছিলেন। সেই পেশা ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে একপর্যায়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হন। যুদ্ধ শুরুর আগে দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। তবে রুশ বাহিনীর হামলার পরও দেশ ছেড়ে না যাওয়া, যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অদম্যভাবে নেতৃত্ব দেওয়া, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আগ্রাসনের শিকার একটি দেশ হিসেবে ইউক্রেনকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সফলতার জন্য দেশ-বিদেশে তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এমনকি অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকার সঙ্গে জেলেনস্কির অবস্থানের তুলনা করছেন। 

Also Read: সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে পুতিন কি যুদ্ধের কৌশল পাল্টাচ্ছেন

যুদ্ধ চলাকালেও নিজ দেশের জনগণ ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে সামাজিক মাধ্যমকে চমৎকারভাবে ব্যবহারের কৌশল বেছে নিয়েছেন জেলেনস্কি। এ কৌশল কাজেও লেগেছে। সুসজ্জিত রুশ বাহিনীর তুলনায় ইউক্রেনের সেনাসংখ্যা  কম। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামও সীমিত। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর রয়েছে উচ্চ মনোবল। তারা নিজ দেশকে রক্ষা করতে লড়ছে। অনেক জায়গায় এই মনোবল কাজে লাগিয়ে রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে দিয়েছে তারা। তবে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে, করছে পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া অর্থ-অস্ত্র-বুদ্ধি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছে কিয়েভ। রাশিয়ার হামলা ইউক্রেনের মানুষকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ করেছে।

Also Read: ‘ইউক্রেনের জন্য’ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে গোলা কিনছে যুক্তরাষ্ট্র

পুতিনের তৃতীয় বড় ভুল, পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া বুঝতে না পারা। ২০০৮ সালে রাশিয়া যখন জর্জিয়ায় আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং রুশনিয়ন্ত্রিত ওশেটিয়া ও আবখাজিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু ইউক্রেন প্রশ্নে পশ্চিমারা বসে থাকেনি। রাশিয়ার হামলা শুরুর পর সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন ইউরোপের সঙ্গে দেশটির ঐতিহাসিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। ওই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভক্ত ও কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল ইউরোপ। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর মধ্য ইউরোপ ও বাল্টিক অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর পক্ষ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মস্কো থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোর জ্বালানি কেনা বন্ধের ঘটনা এর প্রমাণ।

Also Read: খেরসন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার কি পুতিনের জন্য আরেক ধাক্কা

পশ্চিমাদের (বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলোর) মস্কোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখানোর অন্যতম কারণ, ৭৭ বছর পর সর্বাত্মক সম্মুখযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে ইউরোপবাসী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এত বড় পরিসরে যুদ্ধ হয়নি। ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো বুঝতে পারে, তারা এত দিন পুতিনের নীতিকে ভুল বুঝেছে, রুশ আগ্রাসনের ভীতি উপেক্ষা করে এসেছে। তাই ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু ইউক্রেনীয়দের ঐক্যবদ্ধ করেনি, পুরো ইউরোপকে এক করেছে। ইউরোপের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মিত্র দেশগুলোর সম্পর্ক অভাবনীয়ভাবে জোরদার করেছে এই যুদ্ধ।

পুতিনের সর্বশেষ বা চতুর্থ ভুল হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোর সামর্থ্য ও সক্ষমতা বুঝতে না পারা। তিনি ভেবেছিলেন, ইউরোপ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিকভাবে মস্কোর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। বিশেষত, আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাতের জন্য এসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়াবে না, মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। কিন্তু পুতিনের এমন ধারণা ভুল ছিল। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা আরোপে খুব বেশি সময় নেয়নি। 

Also Read: সমঝোতা নয়, যুদ্ধে জয় চান ইউক্রেনীয়রা

২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে ওই সময় নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি মস্কোকে। এমনকি ইউরোপ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর মস্কো পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে রাশিয়ার কৃষি খাত লাভবান হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করা রাশিয়ার জন্য আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।  

Also Read: তলে তলে ইউক্রেনকে পুতিনের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলছে যুক্তরাষ্ট্র

পুতিনের ‘সাম্রাজ্যবাদী’ মনোভাব

শুরু থেকেই পুতিনের লক্ষ্য ছিল, বিশ্বের বুকে রাশিয়াকে অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আর এ জন্য ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয় ও আশপাশের অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো পশ্চিমাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে মস্কোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধে জয় পেলে ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের উত্তরাঞ্চল নিয়ে একটি স্লাভিক ইউনিয়ন গড়ার সুযোগ পাবে রাশিয়া। এ পরিস্থিতি ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকে পুনর্নির্ধারণে বাধ্য করার অবস্থানে রাশিয়াকে নিয়ে যাবে। আর এ অবস্থান রাশিয়া ও পুতিনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটায়; যা বিংশ শতকে ইউরোপের দেশগুলো বিশ্বজুড়ে পরিচালনা করেছে। 

অথচ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় বড় তিনটি পরিবর্তন এসেছিল। দেশটি সমাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে একটি পোস্ট-কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা করেছিল, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থার জায়গায় চালু হয়েছিল উদারনৈতিক বাজার অর্থনীতি এবং সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ঝেড়ে ফেলেছিল সোভিয়েত উত্তরসূরি রাশিয়া। তিনটি ক্ষেত্রেই রাশিয়া এখন অনেক সরে এসেছে; যদিও রাশিয়া আর সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়, তবে বাজারে রাষ্ট্রের প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। আর পুতিনের নেতৃত্বে দেশটিতে নতুন করে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব চাঙা হয়ে উঠেছে।

Also Read: পুতিনবিরোধী রুশরা দেশে থাকবে, নাকি দেশ ছাড়বে?

পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধ, পুতিন একা

ইউক্রেন যুদ্ধের ৯ মাসে পুতিনের রাশিয়ার ‘সাম্রাজ্যবাদী’ মনোভাব অনেকটাই প্রকট হয়েছে। আর এটাই রাশিয়াকে ও পুতিনকে আরও একঘরে করে ফেলেছে। এর প্রমাণ ইউক্রেনীয়দের রুশবিরোধী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। আগে কখনোই ইউক্রেনীয়রা এত ঐক্যবদ্ধ ছিল না। কয়েক দশকের মধ্যে পশ্চিমাদের একতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এমনকি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মতো শান্তিপ্রিয় দেশ নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে। ইউক্রেন এখন ইইউর সদস্য হতে চাইছে। আর এসব হয়েছে শুধু পুতিনের ‘আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী’ মনোভাবের কারণে।

এ ছাড়া ন্যাটোর সর্বশেষ সম্মেলনে পোল্যান্ডে নিজেদের সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটন-মস্কোর বিরোধ আরও দীর্ঘ মেয়াদে গড়িয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া পুরো বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সংকটের মুখে পড়েছে রুশ অর্থনীতি। তাই রাশিয়া ছেড়ে দেশটির প্রায় ৫ লাখ মানুষ অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পুতিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের আর নিজ দেশে ফেরার ইচ্ছা নেই বলে খবর সংবাদমাধ্যমের।

Also Read: যে কারণে ইউক্রেনের সমর্থন কমতে পারে

দুর্দান্ত কৌশলবিদ হওয়ার পরিবর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনকে হতাশা ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি এ যুদ্ধ থেকে যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন, তার প্রায় কিছুই পাননি। যুদ্ধক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, ভুল রণকৌশল ও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে দূরে রেখেছে। তাই এখন পুতিন পশ্চিমাদের হুঁশিয়ার করে পারমাণবিক হামলা চালানোর ভয় দেখাচ্ছেন।

কিন্তু এতেও কাজের কাজ হচ্ছে না; বরং পশ্চিমারা আরও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। পুতিন হয়ে পড়ছেন বিচ্ছিন্ন, একা। নৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে ইউক্রেনে পুতিনের বিপর্যয় তাঁর সাম্রাজ্যবাদী স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করছে। তবে এত কিছুর পরও পুতিন দমার পাত্র নন। তাই খেরসন থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের লাগাম টানার কোনো লক্ষণ এ পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।  

অনুবাদ: মো. আবু হুরাইরাহ্অনিন্দ্য সাইমুম ইমন