মসজিদ কর্তৃপক্ষের আবেদন খারিজ, জ্ঞানবাপি মসজিদের ভূগর্ভস্থ কক্ষে পূজা চলবে
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদের ভূগর্ভস্থ কক্ষে (সেলার বা তহখানা) পূজা–অর্চনা চলবে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের আপত্তি ও আরজি খারিজ করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট আজ সোমবার এই রায় দিয়েছেন।
বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল মসজিদ কর্তৃপক্ষের আরজি খারিজ করে বলেন, বারানসির জেলা আদালত এই বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা বহাল থাকবে। ব্যাস তহখানায় হিন্দুদের পূজা–অর্চনা চলবে।
গত ৩১ জানুয়ারি বারানসি জেলা আদালত ওই নির্দেশ জারি করেছিলেন। তহখানায় পূজা করার অধিকার দাবি করে নিম্ন আদালতে মামলা করেছিলেন শৈলেন্দ্র কুমার পাঠক নামের এক ব্যক্তি। তাঁর আরজি ছিল, তাঁর পূর্বপুরুষ সোমনাথ ব্যাস ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ওই তহখানায় থাকা দেবদেবীর পূজা করে এসেছেন। পূজারির বংশধর হিসেবে তাঁর অধিকার আছে বন্ধ থাকা পূজা–অর্চনা চালিয়ে যাওয়ার। সেই অধিকার তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
জেলা আদালত সেই আরজি মেনে নির্দেশ জারি করলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সেটার বিরুদ্ধে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি না শুনে হাইকোর্টে আবেদন জানাতে বলেন। হাইকোর্ট দুপক্ষের আরজি শোনার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় স্থগিত রাখেন। আজ হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ আবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারে।
হিন্দুদের দাবি, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মূল গর্ভগৃহ ছিল বিশাল। মোগল আমলে সেই ভিতের ওপর মসজিদ তৈরি হয়। সেটি করার সময় ওই গর্ভগৃহে প্রাচীর তুলে মোট চারটি কক্ষ তৈরি করা হয়। সেই চার কক্ষের একটি ছিল ব্যাস পরিবারের দখলে। তাঁরই নামে পরিচিত হয় ভূগর্ভস্থ ওই ‘সেলার’ বা কক্ষের, ‘ব্যাসজি কি তহখানা’।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের আমলে তহখানায় পূজা–অর্চনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন জেলা আদালত।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, তহখানা তাদের দখলে। তা ছাড়া ব্যাসজি কি তহখানায় কোনো বিগ্রহ কখনো ছিল না।
হাইকোর্টের রায়ের পর হিন্দুপক্ষের আইনজীবী প্রভাস গণমাধ্যমকে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই রায় এক বিরাট জয়। এর ফলে সেখানে এখন বাধাহীন পূজা করা যাবে। অযোধ্যা, কাশী ও মথুরায় মন্দির-মসজিদ মামলায় হিন্দুপক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন এই রায়ের পর বলেন, জ্ঞানবাপি মসজিদের অন্তর্গত ব্যাসজি কি তহখানায় যেমন পূজা চলছে, তেমনই চলবে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ উচ্চতর আদালতে গেলে তাঁরাও প্রস্তুত।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের এখনো দাবি, নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনের পরিপন্থী। অযোধ্যা মামলায় রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টও সেই আইনের উল্লেখ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ধর্মস্থান আইন সত্ত্বেও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো কাশী ও মথুরার ‘শৃঙ্খলমোচনে’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্প্রতি বলেছেন, অযোধ্যার মতো কাশী ও মথুরার দাবিও মুসলমানদের ছেড়ে দেওয়া উচিত।
উত্তর প্রদেশ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে যোগী বলেন, ‘আমরা মাত্র তিনটি জায়গা চাই—অযোধ্যা, মথুরা ও কাশী। অন্য জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ওই তিন জায়গা আমরা চাই; কারণ, ওগুলো কোনো সাধারণ স্থান নয়। ওই তিন জায়গা ঈশ্বরের স্থান। ওই তিন স্থানের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন
-
পাঠ্যবই থেকে আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে সুপারিশ বিশেষজ্ঞ কমিটির
-
ফোর্বসের এশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি
-
ছাগলনাইয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা ছিল অবৈধ: হাইকোর্ট
-
কেজরিওয়ালকে নিয়ে বিজেপি দিশাহারা, ইডির আরজিও খারিজ
-
যুদ্ধ শেষে গাজায় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের