যোগীর বক্তব্যের দুদিন পরই জ্ঞানবাপি মসজিদে জরিপ চালানোর নির্দেশ এলাহাবাদ হাইকোর্টের

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে জ্ঞানবাপী মসজিদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদ কোনো হিন্দু দেবালয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত কি না, তা যাচাই করতে জরিপ চলবে। আজ বৃহস্পতিবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকর এ রায় দিয়েছেন। বারানসি জেলা আদালতের রায় বহাল রেখে তিনি বলেন, সেই জরিপ চালাবে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যের দুদিন পর আদালত জরিপের নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেছিলেন, মুসলমানদের নিজে থেকেই মসজিদের দাবি ছেড়ে দেওয়া উচিত।

প্রধান বিচারপতি আজ বৃহস্পতিবার রায় দিয়ে বলেন, এএসআইকে দিয়ে জরিপ করানোর নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত ন্যায্য। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষা করা জরুরি।

আরও পড়ুন

বারানসির জেলা আদালত গত ২১ জুলাই ওই জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২৪ জুলাই সকালে তা শুরু হওয়ার পর মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সর্বোচ্চ আদালত জরিপের কাজে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে আবেদনকারীদের এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানাতে বলেছিলেন।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া কমিটি এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এ রায় হিন্দুধর্মাবলম্বী আবেদনকারীদের উৎফুল্ল করে তুলেছে। হিন্দু মামলাকারীদের আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ রায়ের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, এএসআইয়ের পেশ করা হলফনামা অনুযায়ীই এ জরিপ চলবে। হাইকোর্টের এ সিদ্ধান্তে তাঁরা সন্তুষ্ট।

বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপি মসজিদের একটি দেয়াল অভিন্ন। সেই দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি আছে বলে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একাংশের বিশ্বাস। মসজিদ ও মন্দির কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে অনেক দিন ধরেই বছরে একবার সেই দেবদেবীর পূজা হয়ে আসছে। বারানসির পাঁচ হিন্দু নারী বছরভর সেই পূজার অধিকার চেয়ে মামলা করেন। তাঁদের আরও দাবি, হিন্দু দেবালয় ধ্বংস করে ওই মসজিদ গড়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

সেই দাবির সত্যতা নিরূপণে বারানসির নিম্ন আদালত মসজিদ চত্বরের ভিডিও চিত্র করার নির্দেশ দিয়েছিল। তারপরেই হিন্দুদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মসজিদ চত্বরে ‘শিবলিঙ্গ’ রয়েছে। হিন্দুরা যাকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি জানায়, মসজিদ কর্তৃপক্ষের মতে তা অজুখানার ফোয়ারার মুখ। এ বিবাদের নিরসনে তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গের’ বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পরীক্ষারও দাবি ওঠে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই অংশ (অজুখানা) জেলা প্রশাসন ঘিরে রেখেছে। ওই অংশ বাদ দিয়ে এএসআই জরিপ করবে। হাইকোর্টে এএসআই জানিয়েছে, তারা এমন কিছু করবে না, যাতে মসজিদ ও তার কাঠামোর ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন

হাইকোর্টের রায় আসার দুদিন আগে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জ্ঞানবাপি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, জ্ঞানবাপিকে মসজিদ বলাই উচিত নয়। কোনো মসজিদে ত্রিশূল বা শিবলিঙ্গ থাকে না। দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা থাকে না। তাঁর পরামর্শ ছিল, মুসলমানদের নিজে থেকেই মসজিদের দাবি ছেড়ে দেওয়া উচিত।

প্রায় একই সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, কাশী, মথুরা নিয়ে তাঁরা অযোধ্যার মতো আন্দোলনে যেতে চান না। কারণ তাঁরা জানেন, আদালতের রায়েই তাঁরা একদিন ওই দুই ধর্মস্থানেরও দখল পাবেন।