বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে ‘শিবলিঙ্গের’ সমীক্ষা এখনই নয়

উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদ
ফাইল ছবি এএনআই

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপি মসজিদ–বিতর্ক নতুন মোড় নিল। জ্ঞানবাপি মসজিদের অভ্যন্তরের যে বস্তুটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ‘শিবলিঙ্গ’ বলে দাবি করছেন এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষের মতে যা ‘অজু’র পানির উৎস বা ফোয়ারা, তার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এখনই করা যাবে না। গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এ–সংক্রান্ত এক মামলায় এই নির্দেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পি এস নরসিংহ ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ গতকাল শুক্রবার বলেন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১২ মে ওই শিবলিঙ্গের বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেটিংয়ের মতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা আরও খতিয়ে দেখা ও গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। কাজেই ওই নির্দেশ এখনই কার্যকর করা যাবে না। পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওই রায় স্থগিত থাকবে।

কোনো বস্তুর বয়স নির্ধারণের বৈজ্ঞানিক উপায় কার্বন ডেটিং। যেকোনো প্রাণী ও উদ্ভিদ জীবিত অবস্থায় কার্বন গ্রহণ ও বর্জন করে থাকে। মৃত্যুর পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে কার্বনের পরিমাণ এক জায়গায় থমকে যায়। তেজস্ক্রিয়া পদ্ধতিতে তা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বস্তুর বয়স সম্পর্কে একটি ধারণা করা যায়।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কেন্দ্র ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারও গতকাল এলাহাবাদ হাইকোর্টের ওই নির্দেশ স্থগিত রাখার পক্ষে মত দেয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপি মসজিদের একটি দেয়ালের বাইরের দিকে হিন্দু দেব–দেবীর মূর্তি আছে বলে বিশ্বাস করে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের একাংশ। তারা মসজিদ কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে সেখানে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে পূজা–অর্চনা করে।

সেই দেবদেবীর নিত্য পূজার দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন বারানসির পাঁচ নারী। বারানসির নিম্ন আদালত সেই মামলায় ওই এলাকার জরিপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই জরিপ থেকেই জানা যায়, পানির উৎস ফোয়ারাটি আদতে শিবলিঙ্গ। ওই দাবির সত্যাসত্য নির্ধারণে কার্বন ডেটিংয়ের মতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন জেলা আদালত।

সেই সমীক্ষার ভার দেওয়া হয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) ওপর। পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন।

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি–বাবরি মসজিদ বিতর্কের সময় থেকেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছে। বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপি মসজিদের মতোই মথুরায় কৃষ্ণ জন্মস্থানের লাগোয়া রয়েছে শাহি ঈদগাহ মসজিদ। অযোধ্যা বিতর্কের অবসান ঘটেছে আইনিভাবে। একই রকমভাবে কাশী বিশ্বনাথ ও কৃষ্ণ জন্মভূমিও হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদমুক্ত করতে চান।