Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘিরেই এত আইনি প্যাঁচে ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ‘মার-এ-লাগো’–র বাসায় অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)। ২০২৪ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন ট্রাম্প। কিন্তু তার আগে ট্রাম্পকে আইনি মারপ্যাঁচে ফেলা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ ক্রিস সিলিজা এক বিশ্লেষণে এমনটাই তুলে ধরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নিজের পছন্দের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করা বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ফ্লোরিডার পাম বিচে আমার সুন্দর মার-এ-লাগো বাড়িটা এখন অবরুদ্ধ। অভিযান চালিয়ে বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এফবিআই সদস্যদের বড় একটি দল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি তাঁরা আমার অনুমতি না নিয়েই ঢুকে পড়ে।’ গোয়েন্দা সদস্যরা বিশাল এই আবাসিক ভবনের মধ্যে যে অংশে ট্রাম্প থাকেন এবং তাঁর অফিস রয়েছে, সেখানেই বেশি নজর দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এটা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট ছিল না এফবিআই কোন উদ্দেশ্যে বা কিসের জন্য অভিযানটি চালিয়েছিল, বিশেষ করে তারা কী খুঁজছিল। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, তল্লাশির সময় বিভিন্ন জিনিসপত্রের কিছু বাক্স নিয়ে যাওয়া হয়।

Also Read: ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসায় এফবিআইয়ের তল্লাশি

ফ্লোরিডার পাম বিচে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্ট

ক্রিস সিলিজা বলছেন, এফবিআইয়ের তদন্তকারীরা মে মাসে ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাড়িতে নেওয়া রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় নথিগুলো চেয়ে একটি তলবনামা জারি করেছিলেন। গত বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্প বা তাঁর ঘনিষ্ঠ অন্য কেউ অতি গোপনীয় নথিপত্রের অপব্যবহার করেছেন কি না, তা নিয়ে গ্র্যান্ড জুরি তদন্তের অংশ হিসেবে এ তলবনামা জারি করা হয়।

মার-এ-লাগোতে নিয়ে যাওয়া হোয়াইট হাউসের ১৫ বাক্স নথিপত্র চলতি বছরের শুরুর দিকে পুনরুদ্ধার করা হয় এবং সেগুলা ন্যাশনাল আর্কাইভসে ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত নেওয়া বাক্সগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং–উন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চিঠিও ছিল।

এফবিআই ঠিক একই দিন তল্লাশি অভিযানটি চালিয়েছে, যেদিন নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক ম্যাগি হ্যাবারম্যান টয়লেটে পড়া থাকা কিছু ছেঁড়া কাগজের ছবি প্রকাশ করেছেন। এই টয়লেটগুলোর একটি ছিল হোয়াইট হাউসের। এসব কাগজে থাকা লেখার সঙ্গে ট্রাম্পের লেখার ধরনের মিল আছে।

হোয়াইট হাউসের সাবেক তিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, আর আগ্রহী নন কিংবা পর্যালোচনা শেষ করেছেন, এমন কাগজপত্রগুলো ট্রাম্পকে তাঁরা অনেকবার নষ্ট করতে দেখেছেন। তাঁর এই অভ্যাসের কারণে নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের নথি সংরক্ষণ করাটা হোয়াইট হাউসের কর্মীদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এই কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ফাইল বাক্সে কাগজপত্র জমা রাখতেন। পছন্দ না হলে পত্রিকার ক্লিপিংস ও টুইটের খসড়া ছিঁড়তেন এবং মেঝেতে ছুড়ে ফেলতেন।

Also Read: বাসায় এফবিআইয়ের তল্লাশি নিয়ে যা বললেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাসার সামনে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের অবস্থান

যেগুলো রাখতে চাইতেন, সেগুলো ডেস্কের ওপর অগোছালোভাবে স্তূপ করে রাখতেন।
প্রেসিডেনশিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্ট অনুযায়ী, কাগজপত্র, ই–মেইল এবং প্রেসিডেন্টের যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলো নষ্ট করে দেওয়া ফেডারেল আইনবিরোধী। (এই আইনের অধীন প্রেসিডেন্টের যোগাযোগের সব নথির মালিকানা শেষ পর্যন্ত জনগণের)।

এফবিআইয়ের এ তল্লাশি অভিযানের কয়েক দিন আগেই খবর বের হয়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগের চলমান তদন্তের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যে কথোপকথন করেছিলেন, ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছ থেকে তা আড়াল করতে সক্ষম হবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে সাবেক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের তলব করা হচ্ছে। এ কাজে যেসব আইনজীবী সহায়তা করতে চেয়েছেন, তাদের লক্ষ্য করেও তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত হতে পারেন কি না সে বিষয়ে দেরিতে হলেও নিজের আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন ট্রাম্প। যদিও বিষয়টি সে পর্যন্ত গড়াবে কি না, তা নিয়ে তিনি নিজেই সন্দিহান। রাজনৈতিক কোনো কারণের চেয়ে আইনি জটিলতার কারণে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্টের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। গতকাল ট্রাম্পের বাসায় তল্লাশি অভিযানে এটা স্পষ্ট, দিন দিন তা আরও কঠিন হবে।

Also Read: ট্রাম্প টয়লেটে কী নথি ফ্লাশ করতেন

রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প রিপাবলিকানদের মধ্যেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সপ্তাহান্তে তিনি টেক্সাসে রক্ষণশীলদের একটি সমাবেশে অঘোষিত জনমত জরিপে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। তিনি আবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছেন। তবে এ মুহূর্তে ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়ার চেয়ে তিনি আদৌ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ট্রাম্প যে আইনি তোপে পড়েছেন, তা রিপাবলিকানদের মেনে নিতেই হবে। এফবিআইয়ের গতকালের কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্পের আইনি জটিলতা ক্রমে বাড়ছে।