বাংলার নবাব-চরিত্রের ইতিবৃত্ত

‘অতীতের প্রতিধ্বনি-১’, শিল্পী: ফিরোজ মাহমুদ
‘অতীতের প্রতিধ্বনি-১’, শিল্পী: ফিরোজ মাহমুদ

কেমন লাগবে রাজা হলে? ঔপনিবেশিক বা উত্তর-ঔপনিবেশিক সময়ের কোনো নবাব! রাজদরবার, রানি, সেবাদাসী, জলসাঘর, হাতি, ঘোড়া, মুকুট, সিংহাসন, সৈন্যসামন্ত আর প্রজাদের অধিপতি হলে? কল্পনায় আর স্বপ্নে হয়তো সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে কি সম্ভব? সম্ভব না হলেও সে সময়ের বাংলার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক সত্য আমাদের কমবেশি জানা। তবে ইতিহাস পাঠ না করেও ফিরোজ মাহমুদের ‘রিভাইবেশন’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে তাঁর আঁকা বর্ণনামূলক চিত্র দেখে বাংলার নবাব প্রসঙ্গে অনেক জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে নেওয়া যায়।

চিত্রগুলোতে বর্ণনামূলক কিন্তু দাবা খেলার মতো একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক চাল রয়েছে। শিল্পী সচেতনভাবে ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের পরিবেশ, যানবাহন, আসবাব, জীবজন্তু, উদ্ভিদ প্রভৃতি উপাদান নিয়ে কখনো বাস্তবানুগ, কখনো প্রতীকায়ন ঢঙে সাজিয়ে সে সময়ের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিচ্ছবি দেখাতে চেষ্টা করেছেন।

নবাবরা কি ব্রিটিশদের পুতুল হিসেবে ছিলেন? মাত্রাতিরিক্ত ভোগবিলাস কি পতনের কারণ ছিল? এমন অনেক প্রশ্ন যেমন ছবি দেখে মাথায় আসতে পারে, পরে ছবিটি আরও ভালোভাবে দেখলে প্রশ্নগুলোর সমাধানও নিজের মতো করে পেয়ে যেতে পারেন দর্শক।

‘উপনিবেশিক/পরউপনিবেশিক-৬’
‘উপনিবেশিক/পরউপনিবেশিক-৬’

শক্তির প্রতীক বাঘ কখনো শক্তিহীন কঙ্কাল, অশনিসংকেত হিসেবে প্যাঁচা, আশার আলো হিসেবে আছে পরি—এমন অনেক মোটিভ ও সংকেত জ্যামিতিক রেখায় বন্ধনীযুক্ত করার প্রয়াস আছে ফিরোজের কাজে। এসব তথ্যসংকেতের নির্দেশনা ধরে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ ও পুনর্মূল্যায়নের সুযোগও রয়েছে।

দীর্ঘ সময় জাপানে ছিলেন ফিরোজ। এ জন্যই হয়তো তাঁর কাজে জাপানি উড ব্লক প্রিন্টের ঢং বা আদল রয়েছে। আছে জাপানি ওয়াশের ব্যবহার।

ধাতববিশেষ রঙের ব্যবহারে চিত্রমধ্যে তৈরি হয়েছে দৃশ্য-অদৃশ্যের খেলা। অর্থাৎ দৃষ্টিকোণভেদে এই রং দেখা যায় আবার দেখা যায় না। এ ছাড়া রয়েছে প্রাচ্যরীতির নানা অনুষঙ্গ নিয়ে নিরীক্ষার ছাপ।

অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে ২৭ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত।