নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন চলছেই

সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফরিদপুর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও শরীয়তপুরে ইলিশ নিধন চলছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তা বিক্রি হচ্ছে গোপনে। আমাদের আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ফরিদপুর: সদরপুরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে ইলিশ নিধন শেষে শয়তান ঘাট, পিয়াজখালী ঘাট, আকোট বাজার, মণিকোঠা, কালীখোলা বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় মাছ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীপাড়ের জেলে পরিবারের বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে স্বল্প দামে ইলিশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০০-৩০০ মিটারের একেকটি কারেন্ট জাল নদীতে বেড় দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। মাছ ধরা শেষ হলেই অন্য জেলেদের কাছে নদীতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় গোপনে বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আকটের চর ইউনিয়নের এলাকার এক জেলে মাছ ধরেন শয়তানখালী এলাকায়। তিনি বলেন, তিন লাখ টাকার জাল নিয়েছেন মহাজনের কাছ থেকে। অর্ধেক টাকা নগদ দিয়েছেন, বাকি টাকা মাছ দিয়ে পরিশোধ করবেন। নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, সবাই মাছ মারে—কেউ দিনে, কেউ রাতে। জেল-জরিমানা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের লোক আছে, তারা আমাদের ফোনে জানিয়ে দেয়। আমরা অভিযানকালে দূরে পালিয়ে থাকি। দু-এক ঘণ্টার বেশি তো আর অভিযান হয় না।’
ওই এলাকার আরও তিন জেলে বলেন, দিনে বা রাতে মাছ কেনার জন্য অনেক ব্যবসায়ী ট্রলার নিয়ে নদীতে আসে।
সদরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এ উপজেলায় দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে পাঁচ হাজার মিটার জাল এবং ৫০ কেজি মাছ জব্দ করা হয়েছে।
চরভদ্রাসনের মাথা ভাঙা, চর ঝাউকান্দার পদ্মার নতুন চর হরিমারপুর ইউনিয়নের নমুরসাম চর এলাকাবাসী জানায়, এক কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম বা তার নিচের ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
শরীয়তপুর: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ১৯ জেলেকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া আরও ১১ জেলেকে পাঁচ হাজার করে টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জেলেদের এ দণ্ড দেওয়া হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, গত সাত দিনে শরীয়তপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হয়েছে ১১২টি। ৪৪ জেলেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড দিয়ে আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। মৎস্য আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে ৭৫টি। ইলিশ মাছ শিকারের কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার মিটার।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদ আহমেদ বলেন, ইউএনও পঙ্কজ ঘোষের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মঙ্গলবার রাতে দৌলতদিয়ার পদ্মা নদী থেকে সাতজন জেলেকে আটক করেন। একই সঙ্গে ৫ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ২৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং ৩০ কেজি ইলিশ জব্দ করেন। গতকাল বুধবার আটক জেলেদের মধ্যে পাঁচজনকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অন্য দুজনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।