তূর্ণা এক্সপ্রেসসহ চারটি ট্রেনের বগি কমছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করা আন্তনগর তূর্ণা এক্সপ্রেসসহ চারটি ট্রেনের দুটি করে বগি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাস থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হতে পারে। এতে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগের চেয়ে ১৫৮ জন যাত্রী কম পরিবহন করবে। বগি কমে যাওয়ায় মহানগর প্রভাতী ও গোধূলী এক্সপ্রেস ট্রেনেরও যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা কমবে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ধারণক্ষমতার ৯০ শতাংশের বেশি যাত্রী প্রায় নিয়মিতই পরিবহন করে। রাতে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের কাছে এই ট্রেনটি জনপ্রিয়। এখন আসনসংখ্যা কমে গেলে যাত্রী ভোগান্তি বাড়বে।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে এবং ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে তূর্ণা এক্সপ্রেস যাত্রা করে। এই ট্রেনটি পরদিন সকালে ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতি হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে এবং চট্টগ্রাম থেকে বিকেলে মহানগর গোধূলী হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দুটি রেক (ইঞ্জিনসহ সব বগি মিলিয়ে একটি রেক) দিয়ে এক জোড়া তূর্ণা, গোধূলী ও প্রভাতী ট্রেন চালানো হয়। প্রতি ট্রেনে একটি ইঞ্জিনের সঙ্গে ১৮টি বগি যুক্ত থাকে। এখন ১৬টি বগি নিয়ে চলবে ট্রেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চার ট্রেনের বগি কমাতে রেল ভবনের অপারেশন শাখা থেকে গত মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২ আগস্ট ওই চারটি ট্রেনের রেক কম্পোজিশন (ইঞ্জিনসহ সব বগি মিলিয়ে একটি রেক) পুনর্বিন্যাস করার জন্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়েকে তাগাদা দেয় রেল ভবন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের বর্তমান ধারণক্ষমতা ৬৯৫ জন। দুটি বগি কমিয়ে দেওয়ায় এবং একটি এসি বগির পরিবর্তে স্লিপার বগি সংযোজনের কারণে তূর্ণা আগের চেয়ে ১৫৮ জন যাত্রী কম পরিবহন করতে পারবে। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তূর্ণার যাত্রী ধারণক্ষমতা ৫৩৭ জনে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তূর্ণাসহ যেসব ট্রেনের কোচ (বগি) কমেছে, সেটার বিন্যাস রেল ভবন থেকে হয়েছে। কিন্তু কোচ কমানো হলে যাত্রীর সংকট বৃদ্ধি এবং আয়ও কমার আশঙ্কা থাকে। এ রকম কিছু হলে আমরা অবশ্যই পর্যালোচনা করব। যাত্রী-সংকট তৈরি করে রেলের আয় কমানোর পক্ষে আমরা নই।’
রেলেওয়ে সূত্র জানায়, গত মে মাসে তূর্ণা এক্সপ্রেসের স্লিপার (ঘুমিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা) বগির টিকিট বিক্রি ছিল শতভাগ। এসি চেয়ার ৯৬ শতাংশ এবং শোভন চেয়ার ১০১ শতাংশ (আসনের বাইরে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিটসহ) বিক্রি হয়। জুন মাসে স্লিপার টিকিট ৯৫ শতাংশ, এসি চেয়ার ৮৭ শতাংশ এবং শোভন চেয়ার টিকিটের ৯৩ শতাংশ বিক্রি হয়। জুলাই মাসে স্লিপার ৯৯ শতাংশ, এসি চেয়ার ৯৯ শতাংশ এবং শোভন চেয়ারের টিকিট বিক্রি হয় ১১২ শতাংশ। আগস্টে স্লিপার ১০০ শতাংশ, এসি চেয়ার ৯৩ শতাংশ এবং শোভন চেয়ায়ের টিকিট ১০৭ শতাংশ বিক্রি হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রান্তের টিকিট বিক্রি থেকে মে মাসে আয় হয় যথাক্রমে ১ কোটি ১ লাখ ৩৪ হাজার এবং ১ কোটি ৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা। আগস্টে ঢাকা প্রান্ত থেকে ১ কোটি ৬ লাখ ২৮ হাজার এবং চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা প্রান্ত থেকে ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার এবং চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ২৬ হাজার টাকা আয় করেছে। বগি কমে গেলে তূর্ণার বাৎসরিক আয় ৫ কোটি এবং মহানগর প্রভাতী ও গোধূলীর আয় আরও ৫ কোটি টাকা কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন কোচ আনা হয়েছে। আমরা নতুন কোচ দিয়ে আন্তনগর ট্রেনের রেক কম্পোজিশন তৈরি করেছি। তূর্ণা এক্সপ্রেসে ১৮টির পরিবর্তে ১৬টি বগি দেওয়া হচ্ছে। আপাতত এভাবে চলুক। আমরা আবার পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
রেলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রেলের বহরে আরও ২০টি নতুন বগি রয়েছে। এসব বগি কোনো ট্রেনে যুক্ত না করে রিজার্ভ (সংরক্ষণ) রাখা হয়। দুর্ঘটনা বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বগি নষ্ট হয়ে গেলে তখন রিজার্ভ বগি ব্যবহার করা হয়। রেল ভবন চাইলে চারটি ট্রেনের বগি না কমিয়ে এখান থেকে বগি যুক্ত করতে পারে।