৫০ বছরে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়েই সাজ সাজ রব।  নতুন রং করা হয়েছে ফুলের টবসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়েই সাজ সাজ রব। নতুন রং করা হয়েছে ফুলের টবসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

টবগুলোতে নতুন রং করা হয়েছে। ফুলগাছগুলোও বেশ সতেজ। মাঠে কিছু একটা বানানোর কাজ চলছে। অডিটরিয়ামে রিহার্সালের তোড়জোড়। ক্যাম্পাসজুড়েই সাজ সাজ রব। নানা গল্প, নানা স্মৃতির সাক্ষী লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় এবার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাচ্ছে।
দীর্ঘ ৫০ বছর ১৯৬৬-২০১৬ সাল। কলেজটির যাত্রা শুরু ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে, ১২ বিঘা জমির ওপর ভবন। কলেজের এক স্মরণিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল লালমাটিয়া কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির উদ্যোগে। সোসাইটির টাকা, নিজেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তায় কলেজটি দাঁড়িয়ে গেছে। এখন এর শিক্ষার্থী প্রায় সাত হাজার। শিক্ষক ১৩১ জন।
গতকাল সোমবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণজয়ন্তীর প্রস্তুতি চলছে বিপুল উৎসাহে। অডিটরিয়ামে গিয়ে কথা হয় মার্কেটিংয়ে স্নাতক আয়শা হাসির সঙ্গে। তিনি মহড়া নিয়ে ব্যস্ত। অনুষ্ঠান হবে তিন দিনব্যাপী। কলেজ সম্পর্কে আয়শা বলেন, ‘এটা আমার সেকেন্ড হোম। শিক্ষকেরা অনেক সাপোর্ট করেন।’
প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আছে আবাসিক ব্যবস্থা, খরচ বছরে ১৪ হাজার টাকা। হোস্টেল সুপাররা আছেন। তবে খাওয়ার বিষয়ে ছাত্রীরা নিজেরাই ম্যানেজার নির্বাচন করে, বাজার করে। এটাও তাদের শিক্ষা বলে বিবেচনা করা হয়।
লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় ১৯৯১ সালে ঢাকা মহানগরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। আর ২০১৫ সালে সারা দেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজের মধ্যে হয় দশম। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হার ছিল ৯১ শতাংশ। আর স্নাতক সম্মানে পাসের হার ৯৭। নিয়মিত পাঠ্যক্রম ছাড়াও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে কলেজের প্রতিনিধিত্ব করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন ১৭টি বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক ও ১৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত পড়াশোনা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ আছে। এটি বেসরকারি কলেজ হলেও ফি অনেক কম। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়। শিক্ষার্থীদের সব লেনদেন, তাদের প্রোফাইল—সব অনলাইনে হয়। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মচারীদেরও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কলেজেই ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণ নিয়ে মাসে ভালো আয় করছে এক শিক্ষার্থী।
বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সায়মা জাহান জানান, ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি কলেজে আছেন। বললেন, প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছ আছে। কলেজটি ঘুরে দেখালেন। ঘুরতে ঘুরতেই বললেন, ‘কলেজটি আমাদের শ্রমের ওপর নির্ভর করে চলে।’ কলেজ থেকে পাস করা অনেকেই এখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত। অভিনেত্রী শমী কায়সার এখানকার শিক্ষার্থী ছিলেন। বদরুন্নেসা আহমেদ ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ। বর্তমানে শিক্ষকদের মধ্যে ২১ জন শিক্ষক এ কলেজেরই শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথমবারের মতো তাঁরা শুরু করতে যাচ্ছেন অ্যালামনাই প্রোগ্রাম।
অধ্যক্ষ জানান, ২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই ব্যস্ত আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে। তবে ক্লাস-পরীক্ষা থেমে নেই।
লালমাটিয়া কলেজে এসওএস শিশুপল্লির ১০ জন শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে পড়ছে। এ ছাড়া শাহনাজ আক্তার নামের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও পড়ছে এই কলেজে। মাঠে দেখা গেল, শাহনাজকে হাতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তার সহপাঠী। হালকা-পাতলা গড়নের শাহনাজের মুখে হাসি লেগেই আছে। সে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে পড়ছে। এসএসসির ফল জিপিএ-৪। তার ইচ্ছা, আইনজীবী হবে। ওর সহপাঠীরা জানায়, সবাই নিজ থেকেই শাহনাজকে সাহায্য করে। কাউকে ডাকতে হয় না। শুধু শিক্ষাই নয়, কলেজটি এমন মানবিক মূল্যবোধও সৃষ্টি করেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।