নতুন এলাকার জন্য মহাপরিকল্পনা হচ্ছে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়নকে ১৮ ওয়ার্ডে ভাগ করে প্রাথমিক সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং ভূমির সঠিক ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় নতুন এলাকার জন্য মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রস্তুতের কাজ চলছে।

গত ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আটটি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলো হচ্ছে‍ বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি।

ডিএনসিসি এলাকার আগের আয়তন ছিল ৮২ দশমিক ৬৩৮ বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় উত্তর সিটির মোট আয়তন দাঁড়িয়েছে ১৯৬ দশমিক ২২৮ বর্গকিলোমিটার। নতুন যুক্ত হওয়া এই ৮টি ইউনিয়নের আয়তন ১১৩ দশমিক ৫৯ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নতুন ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার পরে উত্তর সিটি করপোরেশনের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭ হাজার ৩১৯।

সিটি করপোরেশনের সীমানা বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ইউনিয়নের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। নতুন এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ, পানি, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও সড়কের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যুক্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ী এলাকাগুলোর ভূমি ব্যবহারের জন্য বুয়েটের সহযোগিতায় একটি মাস্টারপ্ল্যান করার কাজ চলছে।

এই পরিকল্পনার আওতায় সড়কের আয়তন নির্ধারণ, খেলার মাঠ, পার্ক, জলাধার সংরক্ষণ, সড়ক ও অলিগলিতে সড়কবাতির খুঁটি স্থাপন, ওয়ার্ড কার্যালয় স্থাপন, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, ট্রেড লাইসেন্সসহ একাধিক বিষয়ে কাজ চলছে। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইউনিয়নগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা অনেক ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। এ জন্য ভূমির সঠিক ব্যবহারের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, নতুন অন্তর্ভুক্ত ৮টি ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করে প্রাথমিক সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড্ডা ইউনিয়নকে করা হয়েছে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটারা ইউনিয়নকে ৩৯ ও ৪০ নম্বর, সাতারকুল ইউনিয়নকে ৪১ নম্বর, বেরাইদ ইউনিয়নকে ৪২ নম্বর, ডুমনি ইউনিয়নকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড করা হয়েছে।

হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৪টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। ওয়ার্ড নম্বরগুলো হলো ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪। এভাবে দক্ষিণখান ইউনিয়নকে ভেঙে ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড; উত্তরখান ইউনিয়নকে ভেঙে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড করা হয়েছে। নতুন এই ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হলে ডিএনসিসির ওয়ার্ড সংখ্যা হবে ৫৪টি। এ ছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানার পেছনের এলাকাটি ডিএনসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা নগরের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও কাগজে-কলমে গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এলাকাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া সেভাবে লাগেনি। সবকিছুই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। ঘিঞ্জি, অলিগলি, সরু পথ, এবড়োখেবড়ো সড়ক খানাখন্দে ভরা। এসব এলাকার জন্য সিটি করপোরেশনের চলতি অর্থবছরের বাজেটে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নগুলো সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকার চেয়ে নাগরিক সুবিধায় পিছিয়ে আছে। তাই ইউনিয়নগুলোর উন্নয়নকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। নতুন এলাকার জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।