বিদ্যুৎ-সংযোগের কথা বলে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ!

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিনাতুন নেসার ব্যক্তিগত সহকারীর বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখের বেশি টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাগমারা উপজেলার মোহনপুর গ্রামের ১৩৭ জন গ্রাহকের কাছ থেকে তিনি এ অর্থ আদায় করেন।

ওই সহকারীর নাম বাবুল হোসেন। তিনি টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।                        

মোহনপুর গ্রামের ২০-২৫ জন বলেন, পাশের বীরকয়া গ্রামের বাবুল হোসেন কয়েক মাস আগে সভা করে তাঁদের গ্রামের একটি অংশে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য তিনি প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে সাড়ে ৭ হাজার করে টাকা দাবি করেন। সে অনুযায়ী ১৩৭টি পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে ১০ লাখের বেশি টাকা দেওয়া হয়। তাঁর দুই শ্যালক মহসিন আলী ও কামরুল ইসলামের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়। গত অক্টোবরে উপজেলার অন্য স্থানের মতো গ্রামটিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া শুরু হয়। গ্রামের আটটি পরিবার বাবুলকে টাকা না দেওয়ায় তাঁদের বাড়িতে মিটার স্থাপন করেনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এরপর টাকা আদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে।

মহসিন আলী বলেন, তাঁকে টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বাবুলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর কামরুল ইসলাম নামের আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও কামরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।

মোহনপুর গ্রামের জাহেদুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন ও সায়েম আলী জানান, তাঁরা সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে বাবুলকে এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মিটার বাবদ আরও ৬০০ করে টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁদের বাড়িতে মিটার লাগানো হয়েছে। তবে এখনো সংযোগ দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের বাসিন্দা ও কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ জিনাতুন নেসার ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ায় বাবুল হোসেন এলাকায় প্রভাবশালী ও তদবিরকারী হিসেবে পরিচিত। এ জন্য তিনিসহ (জালাল) এলাকার লোকজন বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য বাবুল হোসেনকে টাকা দেন। পরে তিনি জানতে পেরেছেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে টাকা লাগে না।

গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বাবুল হোসেন বলেন, গ্রামটিতে বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে টাকা খরচ হয়েছে। এ জন্য তাঁকে সামান্য টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা আদায় করে তাঁর শ্যালক মহসিন আলী আত্মসাৎ করেছেন। উল্টো তিনি সব গ্রাহকের মিটারের জন্য পকেট থেকে ৫৫ হাজার টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে দিয়েছেন।

মোহনপুর গ্রামের মোসলেম আলী, ফসির উদ্দিন ও আমানুল্লাহ জানান, তাঁরাসহ আটটি পরিবারের পক্ষ থেকে টাকা না দেওয়ায় তাঁদের বাড়িতে মিটার লাগানো হয়নি। এ অনিয়মের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনও জড়িত।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর বাগমারা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ফসিউল হক বলেন, ‘বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে মিটারের টাকা ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ লাগে না। ওই গ্রামেও লাগেনি। তবে বাবুল হোসেন নামের একজন টাকা নিয়েছেন বলে শুনেছি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিনাতুন নেসা গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, ‘তিনি এ বিষয়ে জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।’