'ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা ব্যক্তির নাম বললেন আশুতোষ'

গত বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন রসরাজের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী আশুতোষ দাস। ১৬৪ ধারায় দেওয়া এ জবানবন্দিতে তিনি ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করা ব্যক্তির নাম বলেছেন বলে জানায় পুলিশ। 

আজ বুধবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শফিকুল ইসলামের আদালতে আশুতোষের জবানবন্দি নেওয়া হয়।
পুলিশ বলেছে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাসের ফেসবুক থেকে ওই ছবি পোস্ট করা হয়। বিদেশ থেকে একজনের ফোন পেয়ে পরের দিন সকালে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে ও শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ওই ফেসবুক আইডি থেকেই একটি লেখা ছাড়েন আশুতোষ।
ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে হামলার ঘটনার শুরু থেকেই অভিযোগ ওঠে, রসরাজের ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড জানতেন আশুতোষ।

আদালতে হাজির করানোর আগের দিন মঙ্গলবার সকালে আশুতোষকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে বাবা অনুকূল দাসের জিম্মায় হস্তান্তর করে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আশুতোষ পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ২৮ অক্টোবর রাতে হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু লালের ছেলে ওমান প্রবাসী মো. মামুন ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টের বিষয়ে দুর্গাপুরের হেমেন্দ্র দাস মাস্টারের ছেলে বিপুল দাসকে অবগত করেন। একই সঙ্গে আশুতোষকেও জানান তিনি। মামুন তাঁদের রসরাজের আইডি থেকে পোস্টটি মুছে ফেলতে বলেন। একসময় রসরাজের সঙ্গে আশুতোষ মুঠোফোনে কথা বলেন। রসরাজ বলেন, ফেসবুকের পোস্ট প্রসঙ্গে তিনি কিছুই জানেন না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, রসরাজের চাচাতো ভাই হৃদয় ও ছোট ভাই পলাশের মাধ্যমে আশুতোষ তাঁর ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড জানেন বলে জানিয়েছেন। ফেসবুকে ছবি কে পোস্ট করেছেন, তা-ও তিনি জানেন বলে জানিয়েছেন।

আশুতোষের বাবা অনুকূল দাস আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে ফেসবুকে এই পোস্ট দেয়নি। এ সম্পর্কে আমাদের কাছে প্রমাণও আছে।’

গত ৩০ অক্টোবর রাতে নাসিরনগরের রসরাজ দাস নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। নাসিরনগর সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে হরিণবেড়ে রসরাজদের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এরপর আরও চার দফায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।