সুরঞ্জিতের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ মে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারাপুর গ্রামে। তিনি মোট সাতবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে চারবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৯৭০ সালে ন্যাপ থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে একতা পার্টি ও ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সাংসদ হন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও পরে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে আসেন তিনি।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। রাজনীতির প্রথম জীবনে বামপন্থী ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে ন্যাপ থেকে নির্বাচন করে প্রথম সাংসদ হন। ওই নির্বাচনে প্রায় সব আসনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেই সময়ের তরুণ সাংসদ সুরঞ্জিত সবার মনোযোগ কাড়েন। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আগে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরিচিত পান ‘ছোট দলের বড় নেতা’ হিসেবে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তা ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী আনতে গঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ছাত্রজীবনের প্রথম অংশ কেটেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এরপর আইনে ডিগ্রি নেন তিনি। পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি কয়েক বছর আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলে ‘সংস্কারপন্থী’ নেতা বলে পরিচিত হন তিনি। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তাঁকে মন্ত্রী করা হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও বাদ পড়েন তিনি। পরে ২০১২ সালে রেলমন্ত্রী হলেও তাঁর সহকারীর গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন সুরঞ্জিত। মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করলেও তা গ্রহণ না করে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।

রাজনীতিতে বাকপটু ও দক্ষ সাংসদ হিসেবে নাম আছে সুরঞ্জিতের। দলে চাপে থাকা এই নেতা একটি আলোচনা সভায় বলেন, ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।’