অপসারিত উপাচার্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপসারিত উপাচার্য মু. আবদুল জলিল মিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার) মো. শাহজাহান আলী মণ্ডল, উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এ টি জি এম গোলাম ফিরোজ, সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোর্শেদ উল আলম (রনী) ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলম।

আজ রোববার সকালে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আকবর আলী এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তিরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই ৩৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। সরকারি বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খাত থেকে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেত- ভাতা দেওয়া হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়েছে; যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, অপসারিত উপাচার্য মু. আবদুল জলিল মিয়া ও রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহান আলী মণ্ডলের অবৈধ সহযোগিতায় স্বজনপ্রীতি হয়েছে। তিনি (সাবেক উপাচার্য) নিজেই বাছাই কমিটি এবং সিন্ডিকেটের সভাপতি থাকার সুবাদে ভায়রা গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে সহকারী অধ্যাপক, মেয়ে রুমানা ফেরদৌস জলিলকে গবেষণা কর্মকর্তা, ভাই মাহবুবুর রহমানকে হিসাবরক্ষক, শ্যালিকার মেয়ে আরা তানজিয়াকে প্রভাষক, ভাইয়ের মেয়ে সীমা আক্তারকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও বোনের মেয়ে মনিরা খাতুনকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেন। ইউজিসির প্রতিবেদনেও এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মণ্ডল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞপ্তিবহির্ভূতভাবে উপাচার্যের অবৈধ অনুমোদন নিয়ে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এ টি জি এম গোলাম ফিরোজ উপাচার্যকে প্ররোচিত ও প্রভাবিত করে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি এই পদে নিয়োগ পান। এ ছাড়া সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোর্শেদ উল আলম ওই পদে বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও উপাচার্যকে প্রভাবিত করে অবৈধভাবে চাকরি নেন। সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলমের চাকরির ক্ষেত্রেও উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও উপাচার্যকে প্রভাবিত করে চাকরি নেন।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদক সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে দিনাজপুরে কর্মরত) আবদুল করিম দুর্নীতি দমন আইনে রংপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেন।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মু. আবদুল জলিল মিয়াকে উপাচার্যের পদ থেকে অপসারণ করে সরকার। এর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করে। আন্দোলনে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে।