৮২ ভাগ জঙ্গি সামাজিক মাধ্যম থেকে উদ্বুদ্ধ

.
.

এ বিষয়ে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করার অর্থ হবে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁর মতে, কোনো দেশের সরকার যখন দুর্বল ভিত্তির ওপর থাকে তখন এ ধরনের নজরদারি করে, যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হয় না। জনগণের করের টাকায় মূল্যবান জিনিসপত্র কিনে মানুষকে শুধু হয়রানিই করা হয়।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের মত হচ্ছে, দেশে প্রচলিত যে আইন আছে, সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করলে আর কিছুই লাগে না। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা করা হয় না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আড়ি পাতার নামে যা হয়, তা অনেকটাই শিশুসুলভ কাজ।

পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫০ জন জঙ্গির ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের ৮০ শতাংশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে থ্রিমা, উইচ্যাট, মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপস ব্যবহার করেছে। কেউ কেউ পৃথক অ্যাপও তৈরি করে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব জঙ্গি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভুয়া পরিচয় দিয়ে তৈরি আইডি ব্যবহার করা। এ ছাড়া প্রয়োজন শেষে দ্রুত তথ্য মুছে ফেলার প্রবণতা, দ্রুত প্রযুক্তি পরিবর্তন ও সরকারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ না থাকা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে জঙ্গিরা সার্বক্ষণিক যে প্রচার করে, তা রোধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। একক কোনো দেশের পক্ষে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ জরুরি। জঙ্গিদের তৎপরতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। প্রযুক্তি জ্ঞানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আগের চেয়ে সমৃদ্ধ হলেও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অনেক সময় পেরে উঠছে না৷

গত কয়েক বছরে ব্লগার, লেখক-প্রকাশকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ফেসবুক ও টুইটারে। হত্যার পর দায় স্বীকারের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম৷ গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যার কথা জঙ্গিরা ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করে৷

পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও সম্প্রতি বলেছেন, দেশি জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিদেশি জঙ্গিদের ‘ভার্চ্যুয়াল জগতে’ যোগাযোগ আছে। তবে দেশে যারা হামলা করছে, তারা দেশেই বেড়ে ওঠা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক এলাহী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন জগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা বিনিয়োগ করছে। এসব ঠেকাতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনেক তৎপর হতে হবে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ সমস্যা নিরসনে কী করা যায়, ঢাকায় পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনের মাধ্যমে তার বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুলিশের সফল আলোচনা হয়েছে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে তদন্ত ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি গোয়েন্দা সরঞ্জাম দেওয়ার কথাও বলেছে। শ্রীলঙ্কা ও চীনের সঙ্গেও একই ধরনের সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চীনের প্রযুক্তি ব্যাপারে খুবই আশাবাদী পুলিশ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এ বছর পুলিশকে ২০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।