অভিভাবকদের ধারণা, 'মারলে' শিশুরা মানুষ হয়

বৃহস্পতিবার ‘আমিই পারি শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে’ শিরোনামে ক্যাম্পেইন পরিচিতি অনুষ্ঠান জানানো হয়, অভিভাবকদের ধারণা, শিশুদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ‘মার’ দেওয়া যেতে পারে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ‘আমিই পারি শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে’ শিরোনামে ক্যাম্পেইন পরিচিতি অনুষ্ঠান জানানো হয়, অভিভাবকদের ধারণা, শিশুদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ‘মার’ দেওয়া যেতে পারে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ।

দেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৮২ শতাংশ শিশু সহিংসতার শিকার। তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ শিশু কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। আর বিদ্যালয়ে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় ৭৭ শতাংশ শিশু। অভিভাবকদের ধারণা, শিশুদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ‘মার’ দেওয়া যেতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার ‘আমিই পারি শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে’ শিরোনামে ক্যাম্পেইন পরিচিতি অনুষ্ঠানে জানানো হয় এসব তথ্য। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা গেছে, পরিবারের কর্তাদের যখন কোনো কাজ বা আয় থাকে না, তখন তাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেন, শিশুদের শারীরিকভাবে অত্যাচার করেন। পাশাপাশি অভিভাবকদের ধারণা, শিশুদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ‘মার’ দেওয়া যেতে পারে।

তাঁরা আরও বলেন, ঘরে, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র—তিনটি ক্ষেত্রেই শিশুরা সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে মা-বাবার হাতে নির্যাতন তথা খুন ও শিক্ষকদের দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা। প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি দ্বিগুণ। শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে দরকার সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ।

অনুষ্ঠানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক মা বলেন, ‘তাঁর পাঁচ বছরের মেয়েকে নানা কারণে স্বামী মারতেন। স্বামীকে বুঝিয়েও নির্যাতন বন্ধ করতে পারছিলেন না। এ ক্ষেত্রে স্বামীর যুক্তি, বাচ্চার ভালোর জন্যই তাকে মারা হয়। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়ে বাচ্চাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে ঘরেই।’

আলোচনায় শিশু মেঘলা আক্তার বলে, সরকার এমন একটি আইন তৈরি করুক; যার ভয়ে মানুষ শিশুদের নির্যাতন করতে ভয় পাবে।

সর্বক্ষেত্রে শিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সংশোধন করতে গিয়ে সরকার যে বিশেষ ধারা রেখেছে; তা মেয়েদের সর্বোত্তম স্বার্থ দেখতে গিয়ে না সর্বোত্তম ক্ষতির কারণ হয়।

আইন পাস হলেও বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে রিয়াজুল হক আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সুপারিশগুলো নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব; যাতে মেয়েদের বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা করা যায়।’

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর ফ্রেড উইটিভিন বলেন, ‘আমাদের উচিত শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া ও তাদের ভালোবাসা। অথচ আমরা তাদের প্রতি নানা ধরনের নির্যাতন চালাই; তাদের অধিকার লঙ্ঘন করি। শিশুদের প্রতি এ ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড জাস্টিস ফর চিলড্রেনের উপপরিচালক শাবিরা নূপুর ক্যাম্পেইনটির বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে জানানো হয়, শিশুর প্রতি সহিংসতা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পাঁচ বছরব্যাপী বিশ্ব ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এ আয়োজন করেছে। এ প্রোগ্রামের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ লাখ শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এতে আরও বক্তৃতা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল মান্নান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুক মিয়াসহ ২১টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। একই সময়ে সারা দেশের ৪০টি স্থানে এই ক্যাম্পেইন পরিচিতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।