চাষি না, লাভবান হবে ফড়িয়ারা

কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন শূন্য চাষির গোলা। এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে সরকারি গুদামে গম কেনার প্রস্তুতি। অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী সরাসরি চাষির কাছ থেকে গম কেনার কথা। কিন্তু চাষির গোলা যখন শূন্য তখন এ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে চাষিরা নয়, লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা।

সম্প্রতি কথা হয় সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের গমচাষি আবদুল কাশেমের সঙ্গে (৫৫)। তিনি বলেন, অধিকাংশ কৃষক ধারদেনা ও ঋণ করে জমিতে ফসল আবাদ করেন। ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তা বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য গোলায় মজুত করে রাখা দরিদ্র কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর গ্রামের কৃষক সত্য রায় (৪৮) বলেন, ‘সরকার এলাও গম কিনা শুরু করে নাই। আমারঠে কী এলা গম আছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ভালোর তানে হামারঠে সরকার গম কিনিবা চাছে, এইখান ভালো কথা। কিন্তু প্রশ্ন হইল যেলা হামারঠে কুনো গম নাই, সেলা ক্যানে গম কিনা শুরু হচে?’

রানীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর গ্রামের গমচাষি হায়াত উদদীন (৫১) বলেন, নিজের গম আগে বিক্রি করে ফেললেও গত বছর হাট থেকে কিনে অনেক চাষি সরকারি গুদামে গম দিয়েছিলেন। এবার হাটবাজারে প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। হিসাব করলে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, ঘাটতিসহ আরও অন্য খরচ যোগ দিলে প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ২৫ টাকার ওপরে। এ কারণে চাষিরা আগেই ব্যবসায়ীদের কাছে গম বিক্রি করে দেন।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, যখন কৃষকের হাতে ফসল থাকে, তখন সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য কেনা শুরু না হলে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। খাদ্যশস্য কেনার এই প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা নয়, ব্যবসায়ী-ফড়িয়ারা গুদামে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে লাভবান হবেন।

জেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনার বিষয়টি মাথায় নিয়ে এবার আমরা আগেভাগেই কৃষকের তালিকা তৈরির কাজ সেরে ফেলেছি। ওই তালিকার কৃষকেরাই গুদামে গম সরবরাহ করবেন। এ প্রক্রিয়ায় ফড়িয়া-মধ্যস্বত্বভোগীরা গম দেওয়ার সুযোগ পাবে না।’

কিন্তু কৃষকেরা জানান, ২০১৫ সালে ১ এপ্রিল থেকে গম কেনার সিদ্ধান্ত থাকলেও হয়। গম কেনা শুরু হয়েছিল ৫ মে। আর গত বছর ১০ এপ্রিল থেকে গম কেনার কথা থাকলেও শুরু হয় ৪ মে। তত দিনে বাজারে গম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন চাষিরা। এতে তাঁরা সরকারের এ সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কিন্তু গম সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের চিঠি অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে খাদ্যগুদামে গম কেনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তা শুরু হয়নি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সভায় প্রতি কেজি গমের মূল্য ২৮ টাকা দরে ১৮ এপ্রিল থেকে সরকারি খাদ্যগুদামে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলায় ১৭ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, গম কেনার প্রক্রিয়া চলছে। দু-এক দিনের মধ্যে গুদামে গম কেনা শুরু হবে।