শীর্ষ দুই পদ শূন্য এক মাস

প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদ এক মাস ধরে শূন্য থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি জুলফিকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, এত দিন ধরে উপাচার্য, সহ-উপাচার্যহীন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের এই বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা উচিত। না হলে মনে হচ্ছে আমরা একধরনের অবজ্ঞার মধ্যে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন ২০ মার্চ রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদ শূন্য হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো উত্তর আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারের আওতার মধ্যে যেসব প্রশাসনিক কাজ আছে তাঁরা সেগুলো করছেন। যেসব কাজের জন্য উপাচার্য, সহ-উপাচার্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, সেগুলো তাঁরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাচ্ছেন। সেখানেই ফাইল পড়ে থাকছে। বিভিন্ন কাজের জন্য আর্থিক অনুমোদন, সিন্ডিকেট সভা, শিক্ষকদের বিদেশে যাওয়া, শিক্ষা ছুটি অনুমোদন, প্রমোশন আবেদনপত্র, শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ ও সনদে স্বাক্ষরের মতো কাজগুলো থমকে আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য তছনছের ঘটনায় বিভাগের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ব্যবস্থা নিতে গেলে তদন্ত কমিটির প্রয়োজন। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ছাড়া এই সিদ্ধান্ত কে নেবেন?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ চার বছরের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও সহ-উপাচার্য হিসেবে চৌধুরী সারওয়ার জাহানকে নিয়োগ দেন। ১৯ মার্চ এই দুজন তাঁদের শেষ কর্মদিবস অতিবাহিত করেন। এরপর তাঁরা নিজ নিজ বিভাগে ফিরে গেছেন। এর আগে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় এক মাস পর নতুন উপাচার্য, সহ-উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য পদের জন্য শিক্ষকদের তিনটি পক্ষ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এক মাস ধরে প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদে কেউ না আসায় ক্যাম্পাসে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। নতুন দায়িত্বে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা গল্প, আলোচনা, সমালোচনা।
১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ১১ (১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিদায়ী উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিনেট অধিবেশনে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচন করবেন সিনেটের সদস্যরা। প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তবে ১৬ বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো উপাচার্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অধ্যাদেশের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্য পদ খালি থাকলে তা পূরণে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, এত দিনেও উপাচার্য, সহ-উপাচার্য না থাকায় অভিভাবকশূন্যতা দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার সমস্যা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবারই এই উপাচার্য, সহ-উপাচার্য নিয়োগের সময় এমন সংকট দেখা দেয়। সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচন, রাকসু নির্বাচন না হওয়ার ফলে সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বলেন, ‘আমাদের আওতার মধ্যে যতটুকু কাজ, সেটুকু আমরা করছি। বাকিগুলো আটকে থাকছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির কোনো জবাব পাইনি।’