গ্যারেজ, দোকান উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির জায়গায়!

ম্যাচ ফ্যাক্টরি পরিচালনা করার কথা বলে সরকারি জমি কিনে নিয়ে সেখানে গ্যারেজ ও দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে আবাসিক ভবন করার। কারখানার মেশিনপত্রের আর নাম-নিশানা নেই। এ ঘটনা ঘটেছে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে। 

উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) একটি প্রতিষ্ঠান। ছয় একর জমির ওপর কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারি বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির আওতায় মাত্র ৩৫ লাখ টাকায় প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। সঙ্গে দায়দেনা ধরা হয় আট কোটি টাকা। শর্ত ছিল বিসিআইসির পাওনা আট কোটি টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির সব সম্পদ বিসিআইসির তত্ত্বাবধানে থাকবে। কিন্তু এখন সেখানে শুধু জমি আছে, কোনো সম্পদ নেই।

রাজধানীর শ্যামপুরে অবস্থিত উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্যাক্টরির যে মালামাল প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু একটি মসজিদ, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপকের অফিস ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট জায়গা খালি পড়ে আছে। ভেতরে এক পাশের খালি জায়গায় ট্রাক, ভ্যান রাখা হয়েছে। আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ভাঙা হচ্ছে ইট। স্তূপ করে রাখা আছে খোয়া। এর পাশে ছোট ছোট কয়েকটি দোকানও আছে। কারখানার দেয়াল দুদিকে খোলা। ফলে লোকজন অবাধে চলাচল করছে। এমনকি প্রধান গেট দিয়ে লোকজন চলাচল করছে।

স্থানীয় লোকজন ও মালিকদের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালিকপক্ষ ওই জমি ২০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে মাসিক ৫০ হাজার টাকায় গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি দোকান থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় হচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাওনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিসিআইসির প্রতিষ্ঠানটির সকল প্রকার সম্পদ নজরদারি করার কথা থাকলেও কেউই এ বিষয়ে কোনো খোঁজ নেয়নি। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের জমি ছাড়া অন্য কোনো সম্পদের অস্তিত্ব নেই। প্রতিষ্ঠানটি ম্যাচ উৎপাদন কারখানা হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য থাকার কথা। ওই বিস্ফোরক দ্রব্য কোথায় গেছে, তা-ও খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ক্রেতাপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি কেনার পর কোনো প্রকার উৎপাদন কার্যক্রম চালু না করে প্রতিষ্ঠানটি অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে, যা বেসরকারীকরণ আইনের পরিপন্থী।

শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে খালি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান, ট্রাক, ভ্যানস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও জমির নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নষ্ট করায় ক্রেতাপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

তবে অভিযোগের বিষয়ে ক্রেতাপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে পানির দামে কিনে নিয়ে মালিকেরা কারখানার স্থাপনা ও মেশিন পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে। অনেক কারখানার জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসন প্রকল্প। অধিকাংশ কারখানার নাম-নিশানাও নেই। উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’