আনন্দ পুরস্কার পেলেন আনিসুজ্জামান

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের হাতে গতকাল কলকাতার একটি হোটেলে আনন্দ পুরস্কার তুলে দেন কবি শঙ্খ ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় (বাঁয়ে) ও কথাসাহিত্যিক হর্ষ দত্ত l ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের হাতে গতকাল কলকাতার একটি হোটেলে আনন্দ পুরস্কার তুলে দেন কবি শঙ্খ ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় (বাঁয়ে) ও কথাসাহিত্যিক হর্ষ দত্ত l ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ১৪২৩ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা গত ১৯৫৮ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবার এই আনন্দ পুরস্কার পেলেন তাঁর লেখা বিপুলা পৃথিবী বইয়ের জন্য। বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার প্রথমা প্রকাশন। প্রতিবছরই আনন্দবাজার পত্রিকা একটি বাংলা বইকে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। ১৯৫৮ সালের ২০ এপ্রিল প্রথম আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ও সমরেশ বসু।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবী তাঁর আত্মস্মৃতি। বইটিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির নানা চিত্র ও তার ঘাত-প্রতিঘাত।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক অভিজাত হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন কবি শঙ্খ ঘোষ। এবারে এই পুরস্কারের নির্বাচকমণ্ডলীতে ছিলেন কৃষ্ণা বসু, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ও সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন হর্ষ দত্ত। আনিসুজ্জামানের উদ্দেশে অভিজ্ঞানপত্র পাঠ করেন আনন্দ বাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি অভিজ্ঞানপত্রে লেখেন, ‘সারস্বত জগতে আদ্যন্ত নিমগ্ন যে অধ্যাপক-গবেষক বাংলা সাহিত্য ও সমাজচিন্তায় বাঙালি মুসলমানের অবদানকে তাঁর ঐতিহাসিক পটভূমিকায় নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন, নতুন দেশের বিশ্ব প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর আত্মকথা তো আসলে বৃহৎ বাঙালির সন্ধানে নিয়ত-বিভ্রান্ত দুই বাংলার গৌরবগাথা। এই বিরল অবদানকে সম্মানিত করার জন্য আপনার বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থটিকে ১৪২৩ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কার প্রদান করা হলো।’
পুরস্কার পাওয়ার পর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বললেন, ‘আমি এই পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত। আমি ২০ বছর ধরে আনন্দ পুরস্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এবার আমি সেই দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর এবার আমাকেই দেওয়া হলো এই পুরস্কার। যেন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের পর এই পুরস্কার প্রাপ্তি। সত্যিই এই পুরস্কার পেয়ে আমি দারুণ আনন্দিত। খুশি।’
১৯৯৪ সালেও আনিসুজ্জামান আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেবারের পুরস্কার ছিল তাঁকে উপদেষ্টা করে বেরোনো ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ নামে হাজার বছরের বাংলা কবিতা, গান ও নাটক নিয়ে ১৪টি ক্যাসেটের সংকলনের জন্য।
১৯৫৮ সাল থেকে এই আনন্দ পুরস্কার প্রবর্তনের পর এখন পর্যন্ত যাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রমথনাথ বিশী, সৈয়দ মুজতবা আলী, সুকুমার সেন, বিমল কর, গৌরকিশোর ঘোষ, সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মতি নন্দী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবুল বাশার, জয় গোস্বামী, নরেন বিশ্বাস, বাণী বসু, নজরুল ইসলাম, হাসান আজিজুল হক, তসলিমা নাসরিন প্রমুখ।