দূষণ কমাবে ন্যানো ছাঁকনি

দূষণ কমাতে উদ্ভাবিত ছাঁকনি হাতে দুই বিজ্ঞানী শাহরিয়ার হোসেন (বাঁয়ে) ও ইয়ুসুকে ইয়ামাউচি l ছবি: পল জোনস
দূষণ কমাতে উদ্ভাবিত ছাঁকনি হাতে দুই বিজ্ঞানী শাহরিয়ার হোসেন (বাঁয়ে) ও ইয়ুসুকে ইয়ামাউচি l ছবি: পল জোনস

যানবাহন ও শিল্পকারখানায় জ্বালানিদূষণ কমানোর নতুন একটি উপায় বের করেছেন চারটি দেশের ১১ জন বিজ্ঞানী। ন্যানো প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা ছিদ্রবহুল একটি ছাঁকনিসদৃশ ধাতব বস্তু উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবক দলে বাংলাদেশের দুজন বিজ্ঞানীও রয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ওই উদ্ভাবন বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস।
গবেষক দলের দুই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম ও অস্ট্রেলিয়ার ওলংগঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন গবেষক মো. শাহরিয়ার হোসেন। শাহরিয়ার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে অস্ট্রেলিয়ার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করছেন। এ ছাড়া জাপান, তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়ার নয়জন বিজ্ঞানী এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।
উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ওই গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ধাতব বস্তুটি মূলত যানবাহনের ধোঁয়া নির্গতকারী নলের মাথায় স্থাপন করতে হবে। এর ফলে নল দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে যে নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইড বের হয়, তা পরিশোধনে ধাতব বস্তুটি ভূমিকা রাখবে। দূষণ কমাতে বর্তমান প্রযুক্তির চেয়ে এটি চার গুণ বেশি কার্যকর। একই সঙ্গে ছাঁকনিসদৃশ ওই ধাতব বস্তুতে জমা হওয়া নাইট্রোজেন পরিশোধন করে পরে তা সার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, রোডিয়াম নামের রাসায়নিক মৌল দিয়ে ছাঁকনিটি তৈরি। মূলত জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ট্রাকগুলোর কারণে বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে এটি কমিয়ে আনবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে এই যন্ত্র বেশি কার্যকর হবে। এসব দেশে যানবাহনে মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বেশি ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৬ সালে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার মোট বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটা ও যানবাহন। এই দুটি উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণকারী উপাদান নাইট্রোজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়।
এ ব্যাপারে গবেষক দলের অন্যতম মো. শাহরিয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি দায়ী। এ থেকে যে নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইড তৈরি হচ্ছে, তা বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই যন্ত্র এই দুটি ক্ষতিকারক উপাদানের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।’
নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত ‘মেসোপোরাস মেটালিক রোডিয়াম ন্যানোপার্টিকেলস’ শিরোনামে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন গবেষক অধ্যাপক ইয়ুসুকে ইয়ামাউচি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেটিভ ম্যাটেরিয়ালসের বিজ্ঞানী। গবেষণার বিষয়ে তিনি ই-মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন ছিদ্রবহুল বস্তুটি বিশ্বের শহরগুলোতে বায়ুদূষণ রোধে বিস্ময়করভাবে কার্যকর। এই মুহূর্তে তাঁদের উদ্ভাবিত বস্তুটি প্রচলিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি কার্যকর।
গাড়ির ইঞ্জিনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সময় বায়ুদূষণকারী নাইট্রোজেন এবং সালফার ডাই অক্সাইড উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে এবং সব জীবের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এসব গ্যাস জীবের কোষে ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি করে। এতে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
এ গবেষণা প্রবন্ধের অন্যতম সহলেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারে একদিকে যেমন বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব হবে, পরোক্ষভাবে এই প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবে।