অধিকাংশ লোককে দেশের উন্নয়ন স্পর্শ করেনি

প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তা অধিকাংশ জনগণকে স্পর্শ করেনি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের নামে অনেক গীত গাওয়া হলেও সাধারণ গরিব মানুষের বড় একটা অংশ দিনে এক-দুই বেলা নিম্নমানের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করছেন।’

গতকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ধারা’ শীর্ষক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক গুণীজন বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

বদরুদ্দীন উমর বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণ মনে করেছিল স্বাধীনতার পর মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং দেশে উন্নয়নের ফসল গণতান্ত্রিকভাবে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে বণ্টন হবে। কিন্তু জনগণের সেই আশা পূরণ হয়নি। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক যে ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল, এখন পর্যন্ত কোনো দলই তার কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি।

দীর্ঘ বক্তৃতায় বদরুদ্দীন উমর পাকিস্তান আমলের পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া, সংবিধানের চার মূলনীতি, প্রথম পরিকল্পনা কমিশন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ও আর্থসামাজিক পরিবেশের ওপর এর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের সমস্যা সম্পর্কে বদরুদ্দীন উমর মন্তব্য করেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রকৃত ভিত্তিকে রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীরা কোথাও সংজ্ঞায়িত করেননি। জনগণের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ, কোনো দলেরই দায় কম নয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুর রহমানের সভাপতিত্বে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহরার আহমদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘চিন্তাচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গুণীজন বক্তৃতা চালু করেছে রাজ্জাক ফাউন্ডেশন। উদার বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করার মাধ্যমে আমাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে।’