ছয় মাসে জামিনে মুক্ত ১৪৮ জঙ্গি, নতুন ঝুঁকির শঙ্কা

নব্য জেএমবির নেতা আবদুর রউফ প্রধানকে গত জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২ জুন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। একই দিন জামিনে মুক্ত হন পুরোনো জেএমবির সদস্য সালেহ আহমেদ। তার আগের দিন বের হন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আরিফুল ইসলাম। এ নিয়ে গত ছয় মাসে কারাগার থেকে জামিনে বের হয় ১৪৮ জন জঙ্গি।

একের পর এক জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, যে হারে জঙ্গিরা জামিনে বের হচ্ছে, তাতে প্রত্যেকের ওপর নজরদারি করা কঠিন। এসব জঙ্গি নতুন করে ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

পুলিশ ও কারাগার সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল রোববার (১১ জুন) পর্যন্ত কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৪৮ জঙ্গি জামিনে মুক্ত হয়। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে জামিনে বের হন ১৩ জন। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে ১১৪ জন জামিনে মুক্ত হন। চলতি মাসের গত ১১ দিনে জামিনে বের জন ২১ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার ও আশুলিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।

তাঁদের মধ্যে আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী নব্য জেএমবি, পুরোনো জেএমবি (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) ও হিযবুত তাহ্‌রীরের সদস্যরা রয়েছেন।

কাউন্টার টেররিজম বিভাগের (সিটি) উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিদের জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, জামিনে বেরিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা যাতে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে তাঁদের ওপর নজরদারি করার চেষ্টা চলছে।

হুজি-বির সদস্য শরিফুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর রাতে উত্তরার আবদুল্লাপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। তিনি গত ১০ মার্চ কারাগার থেকে বের হন। পুরোনো জেএমবি সদস্য চায়নুল রহমান ওরফে বাবুল বের হন গত ১০ জানুয়ারি। তাঁর বিরুদ্ধে সাভার থানায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি মামলা রয়েছে। মিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার আসামি জেএমবির তাওহিদ বিন আহমেদ ১ জুন জামিনে মুক্তি পান।

কারা কর্মকর্তারা বলেছেন, অধিকাংশ জঙ্গিই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জঙ্গিরা যে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে, সেটা আমার নলেজে আছে। জঙ্গিরা যাতে জামিন না পায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তাঁরা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেন। কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, জঙ্গিরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে আবার বড় ধরনের ঘটনা ও হামলায় জড়িয়ে পড়ে। উদহারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, পুরোনো জেএমবির নেতা ফারুক জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে ২০১৪ সালে ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গিনেতাকে ছিনিয়ে নেন। গত বছরের শেষের দিকে ভারতে গ্রেপ্তার হন এই ফারুক।

কারা কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে এখন ৬৬৯ জন জঙ্গি আছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়। গতকাল রোববার পর্যন্ত হাইসিকিউরিটিসহ কাশিমপুরের চারটি কারাগারে ছিল ২৪৫ জঙ্গি। এর মধ্যে হাইসিকিউরিটিতে ২০০ জন, কাশিমপুর-১-এ ১৭ জন, কাশিমপুর-২-এ ২০ জন ও কাশিমপুর-৩-এ ৮ জন আছে। এদের মধ্যে ৮ জন নারী, বাকিরা পুরুষ আসামি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনীর প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ব্যাপক হুমকি রয়েছে। সংশোধন হওয়ার আগে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা যদি জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়, তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। তিনি বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে জঙ্গিদের বেআইনি কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, তাদের ওপর নজরদারি করতে হবে। প্রচলিত আইনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। জঙ্গিরা যাতে সংশোধনের পর বের হতে পারে, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে।