আওয়ামী লীগ ব্যস্ত মেয়র প্রার্থী নিয়ে

>খুলনা আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোন্দল নেই। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি ও বিভক্তি আছে। চলছে নানা গুঞ্জনও। আর এখানকার বিএনপির নেতারা ব্যস্ত একে অপরকে দোষারোপ করতে। তাঁদের বিরোধ এতটাই প্রকাশ্য যে দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করা হচ্ছে। এসব নিয়ে লিখেছেন রোজিনা ইসলাম, শেখ আল-এহসান ও উত্তম মণ্ডল

খুলনা আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল না থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ‘ছোট ছোট’ দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় মেয়র প্রার্থী এখনো ঠিক না হওয়ায় এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বিশেষ করে সাবেক মেয়র তালুকদার 

আবদুল খালেক আর প্রার্থী হবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ার পর এই পদে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দীনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এতে দলের অন্য যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, তাঁরা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে শেখ সালাহউদ্দীন নির্বাচনে এলে তাঁদের সমর্থন থাকবে। তবে ভোটাররা মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের সক্রিয় নেতাকেই দেখতে চাইবেন বলে তাঁরা মনে করেন। বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলালের ছোট ভাই শেখ সালাহউদ্দীন আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নেই। তিনি বিভাগীয় খুলনা অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ও মধুমতি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৯ জুলাই খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় আগামী বছর অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে মেয়র প্রার্থী নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খুলনা সদর আসনের সাংসদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষেই তিনি কাজ করবেন। প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। এ অঞ্চলে দলীয় কর্মকাণ্ডে যেহেতু শেখ হেলালের প্রভাব আছে, তাই ওই পরিবারের সমর্থন যেখানে থাকবে, তাঁর জন্যই তাঁরা কাজ করবেন।

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ায় এবার এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করলে সুবিধা হয়। তিনি নিজেও প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে জানান। তবে শেখ সালাহউদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

গত নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক অর্ধ লক্ষাধিক ভোটে বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে হেরে যান। জেলা ও নগরের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেকের পরাজয়ের কারণ ছিল কোন্দল। নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ছিল। দলীয় কোন্দল মোকাবিলা করে পুরো মাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখে দলকে বিজয়ী করে আনবেন, এমন মেয়র প্রার্থী আপাতত আওয়ামী লীগে নেই।

তালুকদার খালেক বর্তমানে বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ। ইতিমধ্যে তিনি মেয়র নির্বাচন করবেন না বলে বিভিন্ন সময় নেতা-কর্মীদের জানিয়েছেন। দলের মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের প্রভাবশালী একটি অংশ শেখ সালাহউদ্দীনকে প্রার্থী করতে আগ্রহী। এ অংশের যুক্তি, দলের ভেতরে-বাইরে তাঁর কোনো বদনাম নেই। খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হেলাল ও তাঁদের পরিবার বরাবরই প্রভাব রয়েছে।

তবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, খুলনা বিএনপির বড় ঘাঁটি। ‘হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা’ কেউ মেয়র প্রার্থী হলে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আবার সালাহউদ্দীন বা তালুকদার খালেক এই দুজনের কেউ প্রার্থী না হলে খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক মেয়র কাজী আমিনুল হকের নাম শোনা যায়। তবে তাঁর ব্যাপারেও দলের বড় একটি অংশের আপত্তি আছে। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও দলের মধ্যে তেমন প্রভাব রাখতে পারেননি।

মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন, ‘শেখ সালাহউদ্দীনই মেয়র হিসেবে যোগ্য ব্যক্তি। তাঁকে মনোনয়ন দিলে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। বিএনপি হাল ছেড়ে দেবে।’

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে খুলনা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিটি নির্বাচন মাথায় রেখে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি এবং জাতীয় উৎসবগুলোতে নগরজুড়ে তাঁর ব্যানার-তোরণ দেখা যায়।

সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু খালেক ভাই প্রার্থী হচ্ছেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাই আমার প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ রয়েছে।’ শেখ সালাহউদ্দীন প্রার্থী হলে কোনো প্রশ্ন উঠবে না, এমন মন্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশ্ন হবে না সেই জায়গায় যে তিনি পার্টির প্রধানের ভাই, প্রধানমন্ত্রীর ভাই। তবে যাঁরা সরাসরি দল করেন, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।

শেখ সালাহউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, তিনি বিদেশে রয়েছেন।