প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে ইন্টারনেট

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে এমন তরুণদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতা অনেক বেশি। যেসব তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তারা জঙ্গিবাদ প্রসারে অশিক্ষা, ধর্মের অপব্যবহার এবং বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাবের মতো বিষয়ে ততটা সচেতন নয়। অর্থাৎ, নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হতে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে তরুণদের ভাবনা জানতে প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর উল্টো চিত্রও আছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গি মতবাদ ছড়িয়ে তরুণদের বিপথে চলে যাওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রধান শক্তি হলো অনলাইনে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিতি। জঙ্গিগোষ্ঠী যেভাবে ইন্টারনেটকে কাজে লাগাচ্ছে, একইভাবে তাদের আদর্শ প্রতিরোধেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে।

প্রথম আলোর জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট সংযোগ থাকা ৪০ শতাংশ তরুণ মনে করে, ধর্মের অপব্যবহারের কারণে জঙ্গিবাদ বাড়ে। ইন্টারনেট সংযোগ নেই এমন তরুণদের মধ্যে এমন মতামত ধারণ করে ২৮ শতাংশ। একইভাবে নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৩ শতাংশ মনে করে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার কারণে জঙ্গিবাদ বাড়ে। ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত তরুণদের মধ্যে এমন হার অনেক কম, ১৯ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া ২১ শতাংশ তরুণ বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাবে জঙ্গিবাদ বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতন। একই বিষয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত তরুণদের মধ্যে সচেতনতার হার ১২ শতাংশ। অর্থাৎ, যে তিনটি কারণে জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পায়, সেগুলোর বিষয়ে সচেতন থাকতে ইন্টারনেট কার্যকর ভূমিকা রাখে।

জরিপে তরুণেরা আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানে বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাবের বিষয়টি মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়ায়। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশেও অনেকে এমন কাজ করার চেষ্টা করছে বলে মনে করে ১৬ শতাংশ তরুণ।

 তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি দেশে যত কম থাকে, সেখানে জঙ্গিবাদ তত বেশি প্রসারিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মতামত প্রকাশের জন্য জঙ্গিরা ইন্টারনেটকে কাজে লাগায়। এই প্রবণতা কমাতে হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের ব্যবহারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা অনলাইনভিত্তিক জঙ্গিবাদী কার্যক্রম সঠিকভাবে নজরদারি করতে পারে।

ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্ম পালন

জরিপে মতামত প্রদানকারী তরুণদের মধ্যে দেশের প্রধান সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব আছে। এর মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ মুসলমান, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হিন্দু, দশমিক ৩ শতাংশ বৌদ্ধ ও দশমিক ১ শতাংশ খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। এদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, তারা নিজ নিজ ধর্মের আচার ও নিয়ম মেনে চলে। তবে একই সংখ্যক উত্তরদাতা এ-ও জানিয়েছে, ‘অলসতার’ কারণে তারা দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কাজগুলো করতে পারে না।

মুসলিম তরুণদের ২৮ শতাংশ জানায়, তারা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ২৩ শতাংশ, আর এক থেকে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ১৫ শতাংশ তরুণ। শুধু শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার তথ্য জানিয়েছে ২৪ শতাংশ তরুণ। রমজান মাসে নিয়মিত রোজা রাখে ১০ শতাংশ তরুণ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও রোজা রাখা দুই ক্ষেত্রেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। অর্থাৎ, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বেশি গুরুত্ব দেয়। অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিত তরুণেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বেশি পড়ে বলে জরিপে উঠে এসেছে।