ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বার্থেই উপভাষাকে লালন করা উচিত

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বার্থেই প্রতিটি অঞ্চলের উপভাষাকে লালন ও সংরক্ষণ করা উচিত। একেকটি অঞ্চল ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে উপভাষা তৈরি হয়। মুক্ত নদীর মতোই এই উপভাষা সার্বক্ষণিক প্রবাহিত হচ্ছে। উপভাষার সমৃদ্ধি মানে ওই জাতির ভাষাভাষীরই সমৃদ্ধ হওয়া। তাই উপভাষা সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের বাসিন্দাদের দেখতে হবে।

গতকাল রোববার সকালে ‘সিলেট অঞ্চলের উপভাষা: রূপবৈচিত্র্য অনুসন্ধান, সংরক্ষণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া এ কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-সাংবাদিকতা অঙ্গনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পিএসসির সচিব বেগম আকতারী মমতাজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অন্তর্বর্তীকালীন মহাপরিচালক শেখ মো. কাবেদুল ইসলাম। এ ছাড়া সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. আজম খান, জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বক্তব্য দেন। শুরুতেই কর্মশালার কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন মহিউদ্দিন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘সিলেট একটি অসাধারণ জায়গা। এখানে ভাষার রূপ ও বৈচিত্র্য খুবই আকর্ষণীয় এবং মধুময়। এই অঞ্চলের উপভাষা সংরক্ষিত হলে সিলেটের মানুষ আত্ম-আবিষ্কারের সুযোগ পাবেন। মিছিলে দাঁড়িয়ে মিছিলের বিশালত্ব অনুভব করা যায় না, দূর থেকে দেখলে মিছিলের বিশালত্ব চোখে পড়বে। তাই সিলেটি উপভাষা সংরক্ষণে সিলেটবাসীর সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারাও যুক্ত হলে, সেটি হবে ইতিবাচক। সিলেটি-ননসিলেটি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সিলেটি উপভাষা সংরক্ষিত হোক।’

কবি ও গবেষক মোহাম্মদ সাদিক আরও বলেন, মফস্বলে চট করেই কোনো জিনিস বদলায় না। ভাষার বৈচিত্র্য এখনো সিলেটবাসী রক্ষা করে রাখতে পেরেছেন। এ বৈচিত্র্যকে সারা দেশসহ বিশ্বের গবেষক ও বোদ্ধাদের কাছে উপস্থাপন করতে হলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের কাজটুকুও করতে হবে। আর সেটি করতে হবে বুদ্ধি ও হৃদয়ের নিখাদ ভালোবাসা দিয়েই।

কর্মশালার উদ্বোধনী পর্ব শেষে অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সিলেট অঞ্চলের উপভাষার রূপবৈচিত্র্য অনুসন্ধান, সংরক্ষণ ও সম্ভাবনা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। এ পর্বে তিনটি দলের পক্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা, সহযোগী অধ্যাপক জফির সেতু ও এমসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল উদ্দিন বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এর বাইরে মুক্ত আলোচনায় মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক তাহমিনা খাতুন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবীর, এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাহেদা আক্তার প্রমুখ অংশ নেন। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা উপভাষা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের বুলি, লোক গীতিকা, লোকগান, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন, নাগরি পুঁথিসহ লোকসাহিত্যের নানা ধারা-উপধারা সংগ্রহের ক্ষেত্রে জোরারোপ করেছেন।