এ বছরও শেষ হচ্ছে না বাড্ডা ইউলুপের কাজ!

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। ছবিটি গতকাল তোলা l আবদুস সালাম
হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। ছবিটি গতকাল তোলা l আবদুস সালাম

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাড্ডা প্রান্তের ইউ আকৃতির গাড়ি পারাপারের সেতুটির (ইউলুপ) নির্মাণকাজ জুনের মধ্যে শেষ করা যায়নি। এ বছরের শুরুতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছিলেন, জুনের মধ্যে এই ইউলুপ চালু করা যাবে। এখন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেও ইউলুপ নির্মাণ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

মূলত ইউলুপ ব্যবহার করা হয় গাড়ির লেন পরিবর্তনের জন্য। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে যানজটপ্রবণ এই এলাকার বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বাড্ডা ইউলুপটির কাজ এখনো চলছে।

নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, ইউলুপ যেখানে হচ্ছে সেখানে মূল সড়কের নিচে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিষেবা সংস্থার তার ছিল। সেগুলো সরাতে সময় বেশি লেগেছে। আর জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা বিলম্বের আরেকটি কারণ। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেও নিয়মিত কাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজউকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। বাড্ডা ইউলুপটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থে ১০ মিটার। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সাদিক শাহরিয়ার জানান, এ পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে বাকি কাজ শেষ হতে পারে। গত জানুয়ারিতে তখনকার প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেন ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

গতকাল শনিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউলুপের দুই পাশে এখন র‍্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে। এর জন্য মেরুল বাড্ডা থেকে প্রগতি সরণির দিকে যেতে বাম পাশের অংশে রড বিছানো হয়েছে। ডান দিকের র‍্যাম্পের কাজ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। কাজের অগ্রগতির বিষয়ে মেজর সাদিক শাহরিয়ার বলেন, এ সময়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ইউলুপের ওপরের অংশে ইস্পাতের বাক্সগুলো জোড়া লাগানো।

নির্মাণকাজের জন্য রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়কটিতে দুই পাশের গাড়িগুলোকেই সরু পথে চলাচল করতে হচ্ছে। শনিবার ছুটির দিন থাকায় যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও লোকজন জানান, সড়কের এই অংশে যানজট হয় সবচেয়ে বেশি। দুই বছর ধরেই এ ভোগান্তি চলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রামপুরায় প্রথম ইউলুপটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে সাফল্য পাওয়া গেছে। বাড্ডায় এই ইউলুপ নির্মিত হলে রামপুরা, বনশ্রী বা আফতাবনগরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন গাড়ি সহজে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ইউ টার্নমুক্ত। যেসব গাড়ির প্রয়োজন হবে, সেগুলো সহজেই ইউলুপ ব্যবহার করে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে এখন যে যানজট তৈরি হয়, তা আর থাকবে না।

এদিকে পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ২০০৭ সালে শুরু হওয়া হাতিরঝিল প্রকল্পের পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। বাড্ডা অংশের ইউলুপসহ মগবাজার-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক ও হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে নেওয়া প্রকল্পের কাজ এখনো বাকি আছে। অবশিষ্ট আছে নিকেতন অংশে হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা ভবনের নির্মাণকাজ। সর্বশেষ বাড়ানো মেয়াদ অনুসারে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে এগুলো সম্পন্ন করতে হবে।