১০ জেলায় বাধার মুখে বিএনপি

বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে বিএনপি। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে অন্তত ১০ জেলার ১৬টি জায়গায় কর্মসূচিতে বাধার খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপির অভিযোগ, কোথাও পুলিশ, কোথাও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা বাধা দিচ্ছেন। গতকাল শনিবার পিরোজপুরে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপির নেতারা বলছেন, একাধিক জায়গায় পুলিশ বলেছে, শোকের মাস আগস্টে বিএনপিকে এ ধরনের কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না।

প্রথম আলোপিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকালে পিরোজপুর শহরের পোস্ট অফিস সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি ছিল। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের বাধার কারণে পূর্বনির্ধারিত সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি করা যায়নি। সকাল নয়টার দিকে পুলিশ এসে নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বলে। এর আগে মঠবাড়িয়া ও কাউখালীতে সদস্য সংগ্রহে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দিয়েছেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শোকের মাস আগস্টে বিএনপিকে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলি ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জেলা বা মেট্রোপলিটন পুলিশ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গত ১ জুলাই সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এবার ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০, পৌরসভার ওয়ার্ডে ৩০০ ও সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ হাজার করে নতুন সদস্য সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হয়।

গত শুক্রবার নোয়াখালীর কবিরহাটে সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে মওদুদ নিজ বাড়িতে ওই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এর আগে দুপুরে বসুরহাট পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মওদুদ আহমদকে স্বাগত জানাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও ফাঁকা গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত ১৪ জুলাই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও ২৮ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির কর্মসূচি পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বাধার মুখে পড়ে।

৮ আগস্ট সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে কর্মসূচির অনুমতি পায়নি বিএনপি। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে এই কর্মসূচি করা যাবে না। পুলিশের বাধার কারণে আমরা জামালগঞ্জের কর্মসূচি প্রথমে স্থগিত করি। এখন পুরো জেলাতেই এই কর্মসূচি স্থগিত আছে।’

লালমনিরহাট জেলা বিএনপি ৮ আগস্ট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে কর্মসূচি করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠান করার অনুমতিও তাঁরা পাননি। পুলিশ শোকের মাস আগস্টে বিএনপিকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে অনুমতি না দিতে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনার কথা বলেছে।

অবশ্য লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ৮ আগস্ট লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে একাধিক সংগঠনের অনুষ্ঠানের ভেন্যু থাকায় কাউকেই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালাতে দেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আগস্ট শোকের মাস। এরপর কোনো কর্মসূচি করলে সমস্যা নেই। আর আগস্ট মাসে করলেও যেন পুলিশের অনুমতি নিয়ে করা হয়, এটা তাঁরা বলেছেন। তবে মোহনপুর থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেছেন, তিনি শোকের মাস বলে কোনো কর্মসূচি করতে নিষেধ করেননি।

৪ আগস্ট নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা সদরে একটি মাঠে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করলে তাতে আওয়ামী লীগ হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ ১৫ জন আহত হন।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দীন অভিযোগ করেন, সদস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সদর উপজেলার আবদালপুর, বিত্তিপাড়া ও উজানগ্রামে তাঁরা বাধার মুখে পড়েছেন।

৪ আগস্ট বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান ঘিরে দলের আটজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি। অবশ্য শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা ও পরিকল্পনা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর বাইরে গত ২৩ জুলাই টাঙ্গাইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে এবং ১ আগস্ট কিশোরগঞ্জে দলটির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ১৪৪ ধারা জারি করায় কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক জায়গায় তাঁরা বাধার মুখে পড়েছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হতে পারে।