ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পারাপার

তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন মহাসড়ক পারাপার হতে হয়। ছবিটি সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে তোলা l প্রথম আলো
তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন মহাসড়ক পারাপার হতে হয়। ছবিটি সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে তোলা l প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা পাকজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজের পাশে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের মহাসড়কে গতিরোধক নেই। নেই ফুটওভারব্রিজ (পদচারী-সেতু)।

ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনটির ১ হাজার ৮৫ জন শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে। এতে মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা।

তারাগঞ্জ সদরে ওই মহাসড়কের পাশেই কুর্শা পাকজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে আসার বিকল্প পথ না থাকায় প্রায় ১৯০ জন শিক্ষার্থীকে মহাসড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় দেখা যায়, বিদ্যালয়টির চারপাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই, নেই সামনের সড়কে কোনো গতিরোধক। কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও চিহ্ন নেই। সড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলছে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে হাত উঁচিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ময়না খাতুনের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন বাচ্চা নিয়ে মহাসড়ক পার হয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। এখানে বেপরোয়া যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। প্রশাসনের উচিত এখানে ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে শিশুদের পারাপারে উদ্যোগ নেওয়া বা বিদ্যালয়ের সামনে ফুটওভারব্রিজ কিংবা গতিরোধক নির্মাণ করা।’ ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-আমিন বলে, ‘স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে অনেক জোরে গাড়ি চলে। রাস্তার ওই গাড়ির সামনে দিয়েই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি গাড়ির নিচে চাপা পড়লাম।’

ঘনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীকেও ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হতে হয়। মহাসড়কের পাশেই এই বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সামছুল হক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শিশুরা খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা দরকার। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা খাতুন বলেন, দেড় বছর আগে বিদ্যালয়ে আসার পথে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশু বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর অভিভাবকেরা গতিরোধক নির্মাণের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। ইউএনও ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে সীমানাপ্রাচীর ও গতিরোধক নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা মহাসড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে।

তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়ক-ঘেঁষা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীকে ব্যস্ত মহাসড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সড়ক পারাপারের বিষয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা উচিত।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঘনিরামপুর ও কুর্শা পাকজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ইউএনও জিলুফা সুলতানা বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের বিষয়টি আমার জানা আছে। ওই সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

রংপুরের সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে গতিরোধক নির্মাণের কোনো নিয়ম নেই। তবে ওই বিদ্যালয়গুলোর সামনে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো যেতে পারে।