প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

‘তোমরা সবাই ভালো থাকবে। আমার জন্য একটুও কাঁদবে না। তাহলে আমি কষ্ট পাব। তোমরা আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু ইন্দ্র (স্কুলশিক্ষক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র দাস) একটুও ভালোবাসে না। আমার এ মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দ্র।’ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে এ চিঠি লিখেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী বর্ণিতা হাওলাদার (১৪)। আত্মহত্যার চেষ্টা করে গুরুতর আহত হয়ে সে প্রায় দুই মাস চিকিৎসাধীন ছিল। গত শনিবার ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়।

বর্ণিতা ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের মেয়ে। সে উপজেলার পশ্চিম চাড়াখালী হাফেজ উদ্দিন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত। বর্ণিতা তার মৃত্যুর জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র দাসকে দায়ী করেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ইন্দ্রজিৎকে আসামি করে রাজাপুর থানায় মামলা করেছেন বিপুল চন্দ্র হাওলাদার। ইন্দ্রজিৎ উপজেলার পশ্চিম ফুলহার গ্রামের রমেশ চন্দ্র দাসের ছেলে।

বর্ণিতার বড় ভাই বিপ্লব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ইন্দ্রজিৎ দাসের সঙ্গে বর্ণিতার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি পরিবারের সবাই জানত। সম্প্রতি ইন্দ্রজিৎ অন্যত্র বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেন। এই খবর শুনে বর্ণিতা ৮ জুন সন্ধ্যায় নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু ওড়না খুলে বর্ণিতা নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্ণিতার শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারত না। ঢাকায় দুই মাস চিকিৎসার পর অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ৪ আগস্ট তাকে বাড়িতে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে বর্ণিতাকে আবার ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে বেলা ১১টায় তার মৃত্যু হয়।

বিপ্লব হাওলাদার অভিযোগ করেন, বর্ণিতার মৃত্যুর জন্য ইন্দ্রজিৎ দায়ী। বর্ণিতা চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ইন্দ্রজিৎ এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তার মৃত্যুর পর থেকে ইন্দ্রজিৎ পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে ইন্দ্রজিৎ দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, বর্ণিতার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল রোববার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।