'কী করব, বাড়ি তো যাইতে হবে'

হাতের বোতলটির পানিও প্রায় শেষ। গায়ের শার্টের বোতাম কয়েকটি খোলা। প্যান্ট গোটানো। কুড়িগ্রামে যাওয়ার বাসের টিকিট নিতে ভোর চারটা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। মইদুল ইসলাম এখনো জানেন না আদৌ ‘সোনার হরিণ’ টিকিট পাবেন কি না। টিকিটের চাহিদা অনেক। তবে কাউন্টার ব্যবস্থাপকেরা বলছেন, সময়মতো যাত্রী পৌঁছানো নিয়ে সমস্যা হতে পারে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত বাসের অগ্রিম টিকিট। ছবি: আশরাফুল আলম
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত বাসের অগ্রিম টিকিট। ছবি: আশরাফুল আলম

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ শুক্রবার থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সূর্য ওঠার আগেই নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদ করার জন্য মানুষ ভিড় জমিয়েছে রাজধানীর বাস কাউন্টারে। আজ সকালে গাবতলীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, গায়ে-গায়ে মানুষ। এবার ঈদে সরকারি ছুটি আগামী ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর। ফলে ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিটের চাহিদা বেশি। টিকিটপ্রত্যাশী মানুষজনের অভিযোগ তাঁরা কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেন না। কাউন্টার থেকে বলছে শেষ।
আজহার আলী ৩১ আগস্টের পাঁচটি টিকিটের জন্য এসেছিলেন। ফজরের সময় থেকে দাঁড়িয়ে সকাল সাড়ে নয়টায় ৩০ আগস্টের দুটি টিকিট হাতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পাইছি এক দিন আগেরটা। তা-ও দিছে দুইটা। আবার পেছনের সিট।’ বন্যা ও রাস্তার পরিস্থিতিতে বাড়ি যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ‘চিন্তা তো করতেছিই। কয়দিনে পৌঁছাই ঠিক নাই। কী করব। বাড়ি তো যাইতে হবে।’

টিকিট ছাপিয়ে এবার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সময় মতো বাড়ি পৌঁছানো নিয়ে। ছবি: আশরাফুল আলম
টিকিট ছাপিয়ে এবার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সময় মতো বাড়ি পৌঁছানো নিয়ে। ছবি: আশরাফুল আলম

সামনের দিকের আসন না পাওয়ার অভিযোগ আরও কয়েকজনের। আইরিন আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘আমি যখন আসছি, লাইন বেশি ছিল না। কিন্তু তারপরেও সামনের দিকের সিট পাই নাই। তাইলে টিকিট যায় কই?’ নারীদের জন্য ভোগান্তির কথা বললেন রাহেল বেগম। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের যদি পাঁচটা দেয়, মেয়েরা পায় একটা। আমার থেকে অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোক টিকিট নিয়ে চলে গেছে।’
ভোগান্তির অভিযোগের পাশাপাশি আনন্দও আছে। কেউ কেউ ‘সাধের টিকিট’টা হাতে পাওয়া মাত্রই উল্লাস প্রকাশ করছেন। সেই আনন্দের শরিক হচ্ছেন অন্যরাও।
কিন্তু টিকিট ছাপিয়ে সময়মতো যাত্রী পৌঁছানো নিয়ে চিন্তা করছেন কাউন্টারের লোকজন। হানিফ কাউন্টারের মাস্টার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় এখনো গাড়ি আটকে আছে। এখনই এই অবস্থা। ঈদের সময় কী হবে ভয়ে আছি। এইবার কুড়িগ্রাম রুটে চারটি বাস নামবে। গতবার ছিল আটটা।’ তিনি জানালেন, এবার নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বাস যাবে না। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ও রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় এখন থেকেই সমস্যায় পড়েছেন।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের উত্তরবঙ্গ ব্যবস্থাপক খন্দকার রেজাউল করিম যাত্রীদের অভিযোগ নিয়ে বলেন, চাহিদা অনেক। টিকিট কেউ না কেউ তো পাচ্ছে। বাস কম নামানো হবে জানিয়ে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে শতকরা হিসাবে ৪০ ভাগ গাড়ি নামবে। তা-ও সব সিঙ্গেল ট্রিপ। রাস্তার অবস্থা ভালো না।’
গাবতলীর এস আর ট্রাভেলসের সামনেও লাইন। ভোর থেকে দাঁড়িয়ে থাকলেও কাউন্টার খুলেছে সকাল আটটায়। ইসরাত জামান সাতটা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। সকাল দশটা বেজে গেলেও কাউন্টারের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এরা একেক কথা বলে। কাউন্টার খুলছে দেরিতে। তার ওপর নাকি সার্ভারে ঝামেলা। একজনকে টিকিট দিতে অনেক সময় নেয়।’
কল্যাণপুরে শ্যামলীর কাউন্টারেও বেশ ভিড়। তবে এখানে যাত্রীরা বলছেন, টিকিট আছে। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘসময়।