কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে

আরবরা কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা কাপড়কে বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। আজ বৃহস্পতিবার কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতিবছর ৯ জিলহজ, অর্থাৎ হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়।

কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ—দুটোই রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরো বানানো হয়। চারটি টুকরো চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরোগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত। কাবা শরিফের গিলাফের প্রতিটি কাপড়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬৭০ কেজি রেশম, ১৫০ কেজি সোনা ও রুপার চিকন তার। ৪৭ থান সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফ। মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। প্রতিটি থান এক মিটার লম্বা ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। একটা আরেকটার সঙ্গে সেলাই করা। প্রতিবছর দুটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি হয়। একটি হাতে তৈরি, বানাতে সময় লাগে আট-নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। উম্মুল জুদ কারখানায় মদিনায় হুজরায়ে নববির গিলাফও তৈরি করা হয়। গিলাফের অভ্যন্তরীণ পর্দাটির দৈর্ঘ্য সাত মিটার, প্রস্থ চার মিটার।

গোটা গিলাফ, বেল্ট ও অভ্যন্তরীণ পর্দার ১৬টি টুকরায় সোনার আয়াত খচিত আছে। সে ১৬টি টুকরার দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার, প্রস্থ ৯৫ সেন্টিমিটার। কারখানায় গিলাফ তৈরির পর তা কাবা শরিফের চাবির রক্ষক বনি শায়বা গোত্রের মনোনীত সেবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সবার সহযোগিতায় গিলাফ লাগানো হয়।

প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবা শরিফের গিলাফ। রেশমকে রং দিয়ে কালো করা হয়। পরে গিলাফে বিভিন্ন দোয়ার নকশা আঁকা হয়। গিলাফের উচ্চতা ১৪ মিটার। ওপরের তৃতীয়াংশে ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া বন্ধনীতে পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা। বন্ধনীতে ইসলামি কারুকার্যখচিত একটি ফ্রেম থাকে। বন্ধনীটি সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপালি তারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা থাকে। এই বন্ধনী কাবা শরিফের চারদিকে পরিবেষ্টিত। ৪৭ মিটার লম্বা বন্ধনী ১৬টি টুকরায় বিভক্ত। বন্ধনীটির নিচে প্রতি কোনায় সুরা ইখলাস লেখা। নিচে পৃথক পৃথক ফ্রেমে লেখা হয় পবিত্র কোরআনের ছয়টি আয়াত। এতে এমব্রয়ডারি করে ওপরে সোনা ও রুপার চিকন তার লাগানো হয়। এ ছাড়া গিলাফে ১১টি নকশা করা মোমবাতির প্রতিকৃতি আছে। এগুলো কাবা শরিফের চার কোণে লাগানো আছে। খানায়ে কাবা শরিফের দরজার পর্দাটিকে বলা হয় বোরকা। তাও কালো রেশম দিয়ে তৈরি। উচ্চতা সাড়ে সাত মিটার, প্রস্থ চার মিটার। এতে ইসলামি নকশা ও কোরআন শরিফের আয়াত লেখা। এই লেখাগুলোও সোনা ও রুপার চিকন তার দিয়ে এমব্রয়ডারি করা।

সৌদি সরকারের শাসন শুরুর পর মক্কার উম্মুল জুদ নামক স্থানে গিলাফ তৈরির কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গিলাফে কী লেখা থাকে, কী উপাদানে তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে জানালেন কিসওয়া কারখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহ বিন আবদুল রহমান আল হোসাইন। তিনি বলেন, এতে যান্ত্রিকভাবে কাপড় বুনন চালু করা হয়। পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজও চালু রাখা হয়। এই কারখানায় প্রতিবছর কাবা শরিফের গিলাফ তৈরি হয়। গিলাফ তৈরির কারখানায় আছে বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। এগুলোয় এখন ২৪০ জনের বেশি কর্মচারী নিয়োজিত আছেন।

হজ পালন করতে গিয়ে মক্কায় কিসওয়া তৈরির কারখানা দেখে আসতে পারেন। ট্যাক্সিতে কাবা শরিফ থেকে পৌঁছে যাবেন কিসওয়া কারখানায়। পাশেই মক্কা-মদিনার দুই হারাম শরিফে ব্যবহৃত জাদুঘর। জাদুঘরে দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকম কিসওয়া। সেখানে অনেক বাংলাদেশি চাকরি করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন।