মেয়েটি এখন যাবে কোথায়?

মনি রাণী
মনি রাণী

১৪ বছরের কিশোরী মনি রাণী। নয় বছর পর বাবার বাড়িতে এসে দেখে কেউ নেই। স্বজনেরা কেউ তাকে আশ্রয় দিচ্ছে না। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে সে।

মেয়েটি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হুলিখালী গ্রামের স্বপন কুমারের মেয়ে। বাবা স্বপন কুমার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কীর্তন গাইতেন। তার মা বুলবুলি রাণী ছিলেন গৃহিণী। ২০০৮ সালে বুলবুলি রানী পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ধর্মান্তরিত হয়ে এলাকার এক মুসলমান ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তখন মনির বয়স ছিল পাঁচ বছর। এরপর ক্ষোভে বাবা স্বপন কুমার নিরুদ্দেশ হন। এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভারতে চলে গেছেন বলে শোনা গেলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নানি বিনার কাছে কিছুদিন ছিল মনি। পরে উত্তম রায় নামের নওগাঁ শহরের একজন তেল ব্যবসায়ী মনিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে বেড়ে ওঠে সে। উত্তম রায়ের বাড়িতেই সে কাজ করত। মনি জানায়, সম্প্রতি উত্তম রায় ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে তিনি মনিকে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার সকালে ১৪ হাজার টাকাসহ হুলিখালীতে মনিকে পাঠিয়ে দেন। হুলিখালীতে এসে মনি তার বাবা-মায়ের খোঁজ শুরু করে। ওই দিন বিকেল স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সে মায়ের কাছে যায়। উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া গ্রামে তার মা ঘর-সংসার করছেন।

মনি জানায়, বিকেলে মায়ের কাছে গেলে তার মা তাকে আশ্রয় ও স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে তিনি চড়-থাপ্পড় মেরে মনিকে বের করে দেন। সন্ধ্যায় পুনরায় হুলিখালীতে বৃদ্ধা নানির কাছে সে আশ্রয় চায়। তার নানিও অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন। এ কারণে তিনিও মনিকে আশ্রয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে স্থানীয় তিন-চারজন ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এক ব্যক্তির বাড়িতে মনিকে ওই দিন রাখা হয়।

মনির নানি বিনা রাণী (৬৭) বলেন, তিনি অন্যের বাড়িতে আশ্রিত। কীভাবে মনিকে তিনি আশ্রয় দেবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসাহাক আলী বলেন, মনির আপন বলতে কেউ নেই। তাদের কোনো জমিজমাও নেই। খাস জমিতে তার বাবা-মা থাকতেন। সেখানে রাস্তা হওয়ার কারণে সে ভিটাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সে এখন কোথায় যাবে—এটা নিয়ে এলাকার লোকজনও ভাবছেন। তবে কেউ তার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।

স্থানীয় নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না। খোঁজ নিয়ে তিনি মেয়েটির থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি কোনো প্রকল্পের সঙ্গে মেয়েটিকে সম্পৃক্ত করা যায় কি না, এ বিষয়টিও তিনি দেখবেন।