ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও লাখো মুসল্লির ঢল, তিনজনের মৃত্যু

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দিকে সারিবদ্ধ মানুষের ঢল। ছবি: মোহাম্মদ আলম।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দিকে সারিবদ্ধ মানুষের ঢল। ছবি: মোহাম্মদ আলম।

ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগের তীরে আজ শুক্রবার ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের তাবলিগ জামাতের ৪৯তম ইজতেমা শেষ হবে।
আজ বাদ ফজর আম বয়ান করেন তাবলিগের মুরব্বি ভারতের মাওলানা জমশের। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন ভারতের দিল্লির মাওলানা যোবায়েরুল হাসান।
ইজতেমা আয়োজক কমিটি ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইজতেমা মাঠকে ৩৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দেশের ৩৩ জেলার মুসল্লি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত খিত্তা রয়েছে।
বিদেশি অতিথি
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সাথি মো. মসিহ আলম প্রথম আলোকে জানান, ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার তাবলিগের বিদেশি অতিথি এসেছেন। তবে প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মেহমানের সংখ্যা কম থাকবে বলে তিনি জানান। 
পুলিশের ব্রিফিং
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) মাঠে পুলিশের এক ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইজতেমাস্থলকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সেক্টর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। এ সময় ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার আবদুল বাতেনসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া র্যাবের এক হাজার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।

স্বাস্থ্যসেবা

টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও মুন্নুগেট, বাটাগেট ও হোন্ডাগেটে তিনটি উপস্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকবে। ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের জন্য শতাধিক চিকিত্সক ও ১২টি অ্যাম্বুলেন্স বিশেষ সেবা প্রদান করবে। এ ছাড়া র্যাবের চিকিত্সাকেন্দ্র, সিটি করপোরেশনের চিকিত্সাকেন্দ্র এবং বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বিনা মূল্যে চিকিত্সাসেবা দেবে।

বিশেষ বাস ও ট্রেন

গাজীপুর সড়ক ও যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ইজতেমা উপলক্ষে ৩০০ বিশেষ বাস রাজধানীর সাতটি পয়েন্ট থেকে মুসল্লিদের আনা-নেওয়া করবে। এসব বাসে ‘ইজতেমা সার্ভিস’ লেখা থাকবে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ভৈরব, রাজধানীর আজিমপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল থেকে এসব বাস চলাচল করবে। রেল জংশনের স্টেশনমাস্টার হালিমুজ্জামান জানান, প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও বিশেষ ট্রেন সেবা রয়েছে। ২১টি ট্রেন ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে টঙ্গীতে যাতায়াত করবে। আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত সব আন্তনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। 

তিন মুসল্লির মৃত্যু

টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় আসা তিনজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আহমদ মোতালেব (৪৫), সিলেটের হবিগঞ্জের চান মিয়া (৫৫) ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ফকিরহাট খোলা গ্রামের আবদুর রব শেখ (৭০)। বার্ধক্যজনিত ও হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা মারা গেছেন বলে জানা গেছে।    

এর আগে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা ২৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। এর পর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা মাঠের আবর্জনা পরিষ্কার, অজু-গোসলের চৌবাচ্চা ধোয়া, শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, শামিয়ানার চট বাঁধা, হোগলার চাটাই ছেঁড়া-ফাটা পরিবর্তন করাসহ সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। দুই দিন আগে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেন। গতকাল রীতিমতো ইজতেমা মাঠের সব প্রবেশপথেই মুসল্লিদের ঢল নামে। দ্বিতীয় পর্বের এ ইজতেমায় প্রথম পর্বের চেয়েও বেশি মুসল্লির সমাগম হবে বলে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে।