প্রতিবন্ধিতা উত্তরণ মেলা

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে আয়োজিত মেলায় অভিভাবকের সঙ্গে এক শিশু l প্রথম আলো
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে আয়োজিত মেলায় অভিভাবকের সঙ্গে এক শিশু l প্রথম আলো

তারা বিশেষ শিশু। কেউ এসেছে বাবা-মায়ের হাত ধরে। কেউ-বা দাদা-দাদির সঙ্গে। দল বেঁধে শিক্ষকের সঙ্গেও এসেছে অনেকে। তারা স্টলে স্টলে ঘুরছে-দেখছে-কিনছে।

মিরপুর-১৪ নম্বর সেকশনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধিতা উত্তরণ’ মেলা প্রাঙ্গণের দৃশ্য এটি। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই মেলার স্টলগুলো সাজানো হয়েছে প্রতিবন্ধীদের তৈরি নানা সামগ্রী দিয়ে।

২৬তম আন্তর্জাতিক ও ১৯তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলা শুরু হয়েছে গত রোববার। শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা ৩২টি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে।

বিশেষ শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি খেলনা মেলায় নিয়ে এসেছে পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)। সেখানে এসব খেলা দেখছিল বিশেষ শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়াসের শিক্ষার্থীরা। কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সুলতান আহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা এখানে আসতে পেরে খুব খুশি। তবে মেলার সময় আরও বাড়ানো উচিত। গতবার মেলা ছিল সাত দিনের। এবার কমিয়ে পাঁচ দিন করা হয়েছে।

প্রতিদিন বিকেলে মেলা মঞ্চে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার দুপুরে ফাঁকা মঞ্চে আপন মনে নাচতে দেখা যায় ১০ বছরের নেওয়াজ শাফিকে। দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন বাবা শাওনেওয়াজ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শাফি আমাদের দ্বিতীয় সন্তান। এমনিতে ও খুব প্রাণবন্ত। তবে একদমই খেতে চায় না। ঘুমায় না, অস্থির থাকে। মেলায় এসে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতেছে সে। এখানে শিশুদের খেলাধুলার কোনো আয়োজন নেই। থাকলে ওদের সময়টা আরও ভালো কাটত।’

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) মেলায় নিয়ে এসেছে সোলার ট্রাই সাইকেল, স্পিক আপ ডিভাইসসহ নানা উপকরণ। শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক মিয়া সোলার ট্রাই সাইকেল চালিয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটি থাকলে একা একা পথচলা সম্ভব। কিন্তু দামটা বেশি। আমার নাগালের বাইরে।’

থ্রি-পিস, শাড়ি দিয়ে স্টল সাজিয়েছে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি আবুল মনসুর আজাদ বলেন, তাঁদের সব পণ্য বিশেষ শিশুদের হাতে তৈরি। মেলায় আসা ব্যক্তিরা এসব পণ্য কিনে প্রতিবন্ধীদের উৎসাহিত করছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে হাতে হাত ধরে ঘুরতে দেখা যায় পাঁচ কিশোরকে—রিজভি, আল-আমিন, নাহিদ, তারিফ ও আপন। তারা সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শুরুর দিন থেকে প্রতিদিন মেলায় এসেছে তারা।

মেলার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কী? জানতে চাইলে রিজভি বলল, ‘মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা সবাই সমবেত কণ্ঠে গান গেয়েছি। এবারের আয়োজনে ওটাই আমাদের সব থেকে সুখের স্মৃতি।’

৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।