বাদীর বাধায় নষ্ট হচ্ছে আসামির ধান!

পাকা ধান খেতের প্রতীকী ছবি
পাকা ধান খেতের প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের চরনাটিপাড়া গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জমির পাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসল কাটতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই এলাকার শতাধিক বিঘা জমির পাকা ধান জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।

অপরদিকে এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি এবং গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

কাজীপুর থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর রাতে উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের চরনাটিপাড়া গ্রামের আসগর আলীর ছেলে উজাল মিয়া গণপিটুনিতে নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী শেফালি বেগম ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে কাজীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনার পর থেকে গ্রামটির অধিকাংশ পুরুষ বাড়ি ছেড়েছেন। 

২ ডিসেম্বর ওই গ্রামে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার আসামিদের পুলিশ ও বাদীপক্ষ ধান কাটতে বাধা দিচ্ছে। জমির ধান পেকে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। মামলার আসামিদের পরিবারের সদস্য সামসুল আলম, ঝরনা বেগম, রুবিয়া খাতুন অভিযোগ করেন, উজাল গণপিটুনিতে মারা যান। এ ঘটনায় অন্যায়ভাবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কাউকে কাউকে আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে তাঁদের জমির ধান পেকে উঠলেও পুলিশের সহায়তায় বাদীপক্ষ সুলতান মাহমুদ তা কাটতে দিচ্ছেন না। এমনকি বাদীপক্ষ তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিল্পী খাতুন বলেন, প্রত্যেকটা বাড়ি পুরুষশূন্য হওয়ার কারণে কোনো জমির ফসল কাটার জন্য শ্রমিক নেওয়া হলে তাঁদের ভয় দেখিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অনুমান শতাধিক বিঘা জমির পাকা ধান জমিতে ঝরে পড়ছে। অপরদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এমন লোকজনকে ধরে নিয়ে হয়রানিসহ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ শুনেছি এবং ঘটনাটি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উল্লেখ করেছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটুয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বিমল কুমারকে পরিবর্তন করা হয়েছে।’ নিহত উজাল মিয়ার ভাই সুলতান মাহমুদ বলেন, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শকের নির্দেশেই ধান কাটতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও টাকার বিনিময়ে লোক ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নাটুয়াপাড়া ফাঁড়ির পরিদর্শক বিমল কুমার বলেন, ‘হত্যার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। বাদীর ভাই সুলতানই ধান কাটতে বাধা দিতে পারে। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমীত কণ্ডু বলেন, বর্তমানে মামলার তদন্তভার পরিবর্তন করে অন্য এসআই জোবায়দুলকে দেওয়া হয়েছে। বিবাদী পক্ষ পুলিশের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। ধান কে কাটতে পারল কি পারল না এটি পুলিশের ব্যাপার নয়।