ইলিশ রক্ষায় প্রহরী দল

ইলিশ ও মৎস্যসম্পদ রক্ষায় এবার উপকূলের ইলিশ প্রজনন এলাকাগুলোতে জেলেদের নিয়ে কমিউনিটি ফিশ গার্ড নামে অভিনব এক প্রহরী দল গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকো ফিশ প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে এই দল গঠন করা হয়েছে।

চলতি বছরের ১ থেকে ২২ অক্টোবর—২২ দিন দেশের নদ-নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই বাহিনী গঠন করে এবার ব্যাপক সফলতাও পেয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। বর্তমানে এই বাহিনী জাটকা রক্ষায় উপকূলে কাজ করছে।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানান, এবার ৪৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে এবার ইলিশের পোনা বা জাটকা উৎপন্ন হবে ৪০ হাজার কোটি, যা গতবারের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। চলতি জাটকা মৌসুমে এসব পোনা সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে এ অর্থবছরে পাঁচ-ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হতে পারে। জাটকা রক্ষায় বর্তমানে উপকূলের নদ-নদীতে সাড়ে চার ইঞ্চি কম ফাঁসের জাল দিয়ে আট মাস ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।

ইকো ফিশ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও গবেষক মোহাম্মদ নাহিদুজ্জমান প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলের ইলিশপ্রবণ জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরের পাঁচ উপজেলায় এবার পরীক্ষামূলকভাবে জেলেদের বাছাই করে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এতে ১৮৯ জন ইলিশ ধরা জেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গার্ডের সদস্যরা নিষেধাজ্ঞাকালে এলাকায় পাহারা দেওয়া, মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সহায়তা, তথ্য দেওয়ার কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশ ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ইলিশ সুরক্ষা ও সম্প্রসারণে ইকো ফিশ নামে একটি প্রকল্প শুরু করে। সরকারের সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ইলিশ গবেষণা, সুরক্ষা কৌশল, কারিগরি সহায়তাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ এলাকার আবুল বাশার ব্যাপারী নিজেও একজন জেলে। এই এলাকায় প্রহরীদের দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আবুল বাশার বলেন, ‘আমার দলে নয়জন সদস্য রয়েছে। আমরা পালা করে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দিন ও রাতে ১২ ঘণ্টা নদী পাহারা দিচ্ছি। ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার পর এখন ৮ মাস জাটকা রক্ষায় আমরা কাজ করছি।’

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ইলিশের প্রজননের জন্য স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা একটি অনন্য উদ্যোগ।

ইকো ফিশ প্রকল্পের দলনেতা ও মৎস্যবিজ্ঞানী আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কেবল নিষেধাজ্ঞা দিলেই তা কার্যকর করা মুশকিল। এ জন্য জেলেদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা দরকার। এ জন্য আমরা উপকূলে জেলেদের এই কাজে অংশগ্রহণের জন্য কমিউনিটি ফিশ গার্ড বা প্রহরী দল গঠনের ধারণা চালু করি। এবারই প্রথম এই ধারণা থেকে এই দল গঠন করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।’