এবার প্রশ্ন ফাঁস-আতঙ্কে পিএসসি

প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায়ও উঠেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন প্রেসের কর্মচারীরা। এরূপ পরিস্থিতির মধ্যে চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।

এই প্রশ্ন ফাঁসের আতঙ্কে আছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। তাই ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে পিএসসি। এবারের এই বিসিএসে রেকর্ড–সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। পিএসসি চাইছে এই পরীক্ষায় যাতে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস না হয়। ২৯ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পিএসসি সূত্র জানায়, এ বছর ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এর আগে ৩৭তম বিসিএসে অংশ নেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষার্থী। এর আগে সেটিই ছিল বিসিএসে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর আবেদন।

পিএসসির একাধিক সূত্র জানায়, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যাতে প্রশ্ন ফাঁস না হয়, সে জন্য বেশ কয়েক সেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের পরীক্ষার প্রতিটি কেন্দ্রে পিএসসি নিজস্ব টাকায় দুটি করে মেটাল ডিটেক্টর সরবরাহ করছে এবং প্রতিটি পরীক্ষার হলে একটি করে ঘড়ি দিচ্ছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে আলাদা করে বিশেষ বৈঠক করা শুরু করেছে পিএসসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিচ্ছি। এরই মধ্যে পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করছি, কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় ও পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস না হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে যারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে তাদের কীভাবে ধরা যায়, সে–সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানও নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবারই যেহেতু সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, তাই আমরা অনেক বেশি সতর্ক আছি যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।’

পিএসসি সূত্র জানায়, এই সপ্তাহে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, হলপ্রধান, হল পরিদর্শক, পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যাঁরা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবে পিএসসি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে ও তা কীভাবে ঠেকানো যায়, তার প্রস্তুতি পিএসসি নিচ্ছে বলে জানায় ওই সূত্র।

সর্বশেষ পিএসসির সিনিয়র স্টাফ নার্স পরীক্ষা নেওয়ার সময় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। পরে সত্যতা যাচাই করে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পিএসসি। ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। তাঁদের নম্বরের ব্যবধান ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হবে বলে মনে করছে পিএসসি।

এই বিসিএস থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলির ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় আলাদা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন রাখা হবে। কেউ চাইলে ইংরেজিতেও এই বিসিএস দিতে পারবেন। সাত বিভাগের পাশাপাশি এবার নতুন বিভাগ ময়মনসিংহেও পরীক্ষা নেওয়া হবে।